স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় এবং স্ক্যাবিসের মলম সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আপনারা অনেকেই স্ক্যাবিস বা খোস পাঁচড়া যা ত্বকের একটি সংক্রমক সমস্যা সম্পর্কে জানতে চান। অথবা অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না ।তাদের জন্য আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা স্ক্যাবিস সম্পর্কে কিছু বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় কি এবং স্ক্যাবিসের মলম সম্পর্কে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাতে চলেছি স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় এবং স্ক্যাবিসের মলম সহ স্ক্যাবিস সম্পর্কে নানান তথ্য। পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আরো জানতে পারবেন স্ক্যাবিস কি,স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায়,স্ক্যাবিস এর সাবান, পারমেথ্রিন সাবান ব্যবহারের নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য।
স্ক্যাবিস কি:
স্ক্যাবিস যাকে বলা হয় খোস-পাঁচড়া। স্ক্যাবিস একটি চুলকানি যা মাইট নামক অতিক্ষুদ্র পোকার আক্রমণে সৃষ্ট ত্বকের উপদ্রব। এটি একটি সংক্রমণজনিত রোগ।স্ত্রী মাইট ত্বকের নিচে ডিম পাড়তে শুরু করে এবং এর তীব্রতা বাড়ে। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি তৈরি করে এবং প্রচুর চুলকানির সৃষ্টি হয়।
এ রোগের লক্ষণ হল ত্বকে তীব্র চুলকানি, জ্বালাপোড়া,ত্বকে লাল দাগ, ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া, ফোসকা পড়া ও ঘা হয়ে যাওয়া। যে কেউ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মতো সময় লাগে তা শরীরে প্রকাশ পেতে।সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে অন্যান্য ব্যক্তিরা ও এই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, বিছানা, বালিশ ব্যবহার করলে এর রোগ হতে পারে।আমাদের এই আর্টিকেলের নিচের অংশে স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় কি সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। এবার আসুন, স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় :
স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া একটি সংক্রামক ব্যাধি। এর প্রভাবে শরীরে লাল লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং চুলকানি সাথে ত্বক জ্বালা করে। সাধারণত হাঁটু, কনুই, কাঁধ, বগল, স্তনের নিচে, আঙ্গুলের ফাঁকে, কোমর ও নিতম্ব এলাকায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। আপনারা অনেকেই জানতে চান স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় কি? সে সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানা দরকার । তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই উপায় গুলো সম্পর্কে।
নিম পাতা : আমরা অনেকেই নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত রয়েছি। বিভিন্ন রোগের নিরাময় হিসেবে নিম পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিম পাতায় ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকনাশক উপাদান বিদ্যমান যার জন্য এটি স্ক্যাবিস নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
নিম পাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শুকিয়ে এলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। অথবা কিছু পরিমাণ পানিতে নিমপাতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে এই পানি হালকা গরম থাকা অবস্থায় আক্রান্ত স্থান ভালোভাবে ধুয়ে নিন।এভাবে কয়েকদিন ব্যবহারের ফলে স্ক্যাবিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রসুন : যেকোনো সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধে রসুন বেশ কার্যকরী। রসুনে বিদ্যমান শক্তিশালী আন্টি ব্যাকটেরিয়াল যা মাইট নামক অতিক্ষুদ্র পোকাকে অপসারণ করতে পারে। প্রথমে রসুনকে ভালোভাবে থেতলে তা থেকে রস বের করে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। সাথে সাথে প্রতিদিন ৩-৪ কোয়া রসুন খান। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রসুনের রস আক্রান্ত স্থানে লাগালে এবং প্রতিদিন নিয়মিত রসুন খেলে স্ক্যাবিস নিরাময় করা সম্ভব হয়।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী : অ্যালোভেরা বা ঘৃতুকুমারী এর জেল এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন হওয়ায় ত্বকের নিরাময়ে এটি কাজ করে। এলোভেরার ভিতরের জেল নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি মাইট অপসারণ করতে কাজ করে এবং ইনফেকশন দূর করে ত্বকের যত্নেও কাজ করে থাকে।
স্কাবিস এর সাবান:
স্কাবিস দূর করার সাবান সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। স্কাবিস দূর করতে সাধারণত পারমেথ্রিন সাবান বেশ কার্যকরী।পারমেথ্রিন সাবান ত্বকের স্ক্যাবিস দ্বারা সৃষ্ট ফুসকুড়ি এবং মাইট এবং তাদের ডিমকে মেরে ফেলে। এবং এই উপসর্গ থেকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন উপাদান যেমন নিম, ট্রি টি অয়েল এবং অন্যান্য অ্যান্টিসেপটিক উপাদান সমূহ দিয়ে স্কাবিস এর সাবান তৈরি করা হয়।সাধারণ সাবানের মত স্ক্যাবিসের সাবান ব্যবহার করতে পারেন। পারমেথ্রিন গ্রুপের বিভিন্ন সাবান বাজারে পাওয়া যায় যা স্ক্যাবিসের চুলকানিতে অথবা উকুনের উপদ্রব কমাতে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
পারমেথ্রিন সাবান ব্যবহারের নিয়ম:
পারমেথ্রিন সাবান ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ। আপনারা যারা পারমেথ্রি সাবান ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য বলি প্রথমে বাজার যাচাই করে আসল পারমেথ্রিন সাবান সংগ্রহ করুন। বিভিন্ন ঔষধের দোকানে বিভিন্ন নামে এই সাবান পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে এই সাবান লাগান এবং কিছুক্ষণ রেখে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া এই সাবানের প্যাকেজিং এর প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে ব্যবহার করতে পারেন।স্কাবিস নিরময়ে পারমেথ্রিন সাবান এবং স্কাবিসের মলম ও বেশ কার্যকরী।
স্ক্যাবিসের মলম:
পারমেথিন ৫% ক্রিম স্ক্যাবিস এর জন্য সাধারণত একটি কার্যকরী মলম। যা ব্যবহার করলে স্ক্যাবিস সহজেই নিরময় করা যায়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি এটা ব্যবহার করতে পারবেন।স্ক্যাবিসের মলম গলা থেকে পা পর্যন্ত রাতে পুরো শরীরে লাগাতে হয় এবং ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলুন।
এই মলম গর্ভবতী বা শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।স্ক্যাবিস বা খোস পাচরা রোগের চিকিৎসায় পারমেথিন ৫% ক্রিম লাগানোর জন্য গোসলের পর ভালোভাবে পুরো শরীর শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গলা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ভালোভাবে মলমটি শরীরের সাথে মিশে যাওয়া পর্যন্ত লাগাতে হবে। ৮ থেকে ২৪ ঘন্টা পর সাবান ও গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে গোসল করতে হবে ।
এবং পরিবারের সকলের ব্যবহৃত জামাকাপড় সাবান এবং গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে সাত দিন পর একই নিয়মে আবারো মলমটি ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত হলে পরিবারের সকল সদস্য একসাথে এই মলম ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয় না।
স্ক্যাবিস কেন হয়:
স্ক্যাবিস একপ্রকার চর্মজনিত রোগ।Sarcoptes Scabei একপ্রকার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। স্ক্যাবিস আসলে মাইক্রোস্কপিক আট পায়ের মাইটের সংক্রমণ। আপনার ত্বকের উপরের স্তরে গর্ত করে এই মাইগুলি বাসা বাঁধে এবং বেঁচে থাকে। এবং তাদের বংশবিস্তার করে। এই মাইট গুলি অতি সহজেই এক ব্যাক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে স্থানান্তর হতে পারে।স্ক্যাবিস কেন হয় এবং স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় কি সে সম্পর্কে সকলেরই অবগত থাকা উচিত।
সাধারণত যৌন সক্রিয় প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু, ছোট বাচ্চাদের মা এবং যারা নার্সিংহোমে সহায়তা দেন তাদের অতি দ্রুত সংক্রমণ হয়ে থাকে। এই মাইট গুলি মানুষের শরীরে ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে। এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে অথবা বিছানা, পোশাক এবং আসবাবপত্রের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে।আশা করি, স্ক্যাবিস কেন হয় সে সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এবার নিচে আমরা আলোচনা করব স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় কি সে সম্পর্কে।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয়:
স্ক্যাবিস কোন জীবননাশক ব্যাধি নয়। তবে এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর একটি অবস্থা। আপনারা অনেকেই স্ক্যাবিস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়ে থাকেন। আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাদের সঙ্গে স্ক্যাবিস প্রতিরোধের কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
- যে সকল ব্যক্তিরা স্ক্যাবিস দ্বারা আক্রান্ত সরাসরি তাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন
- নিয়মিত সঠিকভাবে গোসল করুন
- নিয়মিত হাত পা পরিষ্কার রাখুন এবং হাত পায়ের নখ কাটুন
- অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশ অথবা পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকুন
- আপনার বিছানা এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন
- স্কুল কলেজ বা কর্মস্থলে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- বাড়ির একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের সকলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিন
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য সব ধরনের কাপড় চোপড় সাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন
- যেহেতু নিমপাতা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নাশক সেহেতু আক্রান্ত স্থানে নিম পাতা পেস্ট করে লাগান এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন
- এলোভেরা জেল এই শীতল জেলটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার এটি ত্বকের নিরাময় ও পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করে তাই স্ক্যাবিস দূর করতে আক্রান্ত স্থানে এই জেল লাগান
- মানুষের শরীর ছাড়া মাইটগুলো ২ থেকে ৩ দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। তাই এই সময়টা আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
লেখক এর মন্তব্য:স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় এবং স্ক্যাবিসের মলম
প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল স্ক্যাবিস কি এবং এর রোগ কিভাবে ছড়ায় এর প্রতিকারের উপায় কি ইত্যাদি। এই রোগের একমাত্র প্রতিকারের উপায় হচ্ছে সচেতনতা। এটি একটি সংক্রমণজনিত রোগ যা শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করে।এই রোগের চিকিৎসা এবং কিভাবে প্রতিকার ও প্রতিরোধ করবেন তা নিয়ে আজ এ আর্টিকেলের আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন যে স্ক্যাবিস কি,স্ক্যাবিস কেন হয়,স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায়,স্ক্যাবিসের মলম,স্ক্যাবিস এর সাবান, পারমেথ্রিন সাবান ব্যবহারের নিয়ম এবং স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনার উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদের ও পড়ার সুযোগ করে দিন। আর এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url