দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার

দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ি সমস্যা বর্তমান সময়ে খুবই কমন একটি সমস্যা। দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান করতে আমরা বিভিন্ন ডাক্তার বা কবিরাজের সন্ধান করে থাকি। শুরুতে জানতে হবে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। অযত্ন এবং অবহেলার কারণে মানুষ আল্লাহর দেওয়া এই মহামূল্যবান নেয়ামতের অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার
এতে করে একটা সময় অনেক অসুবিধায় পড়ে এবং অনেক অর্থ খরচ হয়ে থাকে। একটু সচেতন এবং যত্নশীল হলেই মানুষ দাঁতের সমস্যা দূর করতে পারে।

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে দাঁতের সমস্যা সবার কাছে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দাঁত মানুষের আল্লাহর দেওয়া এক বড় নেয়ামত। দাঁত আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দিয়েছেন যেমন উপকারের জন্য তেমনি মানুষের সৌন্দর্যের জন্যও বটে। দাঁত বিহীন মানুষকে দেখতে যেমন অসুন্দর লাগে তেমনি রয়েছে দাঁতের সমস্যার অনেক অসুবিধা।

দাঁতের সমস্যা মানুষের বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। দাঁতে ব্যথা, দাঁতে ক্ষয়, দাঁত ভেঙে যাওয়া, দাঁতে পাথর পড়া এসব কিছুই দাঁতের সমস্যার মধ্যে পড়ে। দাঁতের মাড়ি সমস্যা সমাধান কতে টাকার প্রয়োজন হয় না। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে বা দাঁতের বিভিন্নভাবে যত্ন না নিলে দাঁতের এসব সমস্যা হতে পারে। তবে দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান করার উপায় ও রয়েছে। মানুষকে দাঁতের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝা এবং নিয়মিত এর যত্নের মাধ্যমে দাঁতের সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করা যেতে পারে।

দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান

দাঁতের মাড়ি ব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয়, তখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি এবং ওষুধ খাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করি। অসর্তকতা ও অবহেলার কারনে আমাদের এই সমস্যা দিন দিন বাড়তেই থাকে। কিন্তু কিছু উপায় যা প্রয়োগে আমরা সহজেই দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান করতে পারি। নিচে দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান করার কিছু সহজ উপায় দেওয়া হল-
দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান
  • অলিভ অয়েল তেল এর সঙ্গে দুটি লবঙ্গ থেঁতো করে একসঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগালে দাঁতের ব্যথা অনেকটা কমে আসে। লবঙ্গ চিবিয়ে ব্যাথার স্থানে চেপে রাখলেও আরাম পাওয়া যায়।
  • রসুন থেঁতলে তার সাথে কিছু লবণ মিশিয়ে ব্যথার স্থানে লাগালেও ভালো ফল আসে। এছাড়া দাঁতে বেশি পরিমাণ যন্ত্রণা হলে রসুন চিবিয়ে খেতে হবে।
  • গোল মরিচ এবং লবণ এক সঙ্গে মিশে পেস্ট তৈরি করে দাঁতে লাগালে দাঁতের ব্যথা কমে যায়।
  • কাঁচা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেলে বা পেঁয়াজ দাঁতের যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে চেপে রাখলে আরাম পাওয়া যায়।
  • ২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে আধা চা চামচ হিং গুড়ো একসাথে মিশিয়ে দাঁতে লাগালে দুই মিনিটে দাঁতের ব্যথা শেষ হয়ে।
  • এক গ্লাস অল্প গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতে ব্যথা আরাম পাওয়া যায়।
  • দুটি বা তিনটি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে ব্যথাওয়ালা দাঁতে চেপে রাখলে আরাম পাওয়া যায়।
  • কয়েক ফোটা ভ্যানিলা তুলাতে নিয়ে দাঁতে চেপে রাখলে দাঁতে ব্যথা আরাম পাওয়া যায়।
  • দাঁতের ব্যথা কমাতে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দূর্বা ঘাসের রস দারুন উপকারি।এক টুকরা বরফ তুলা বা কাপড়ে মোড়ে দাঁতে চেপে রাখলে দাঁতে ব্যথা আরাম পাওয়া যায়।

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার

দাঁতের সমস্যার আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া। আমাদের শরীরের ভিটামিনের ঘাটতির কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি এবং কে এর ঘাটতির কারণে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। এছাড়া আরো অন্যান্য কারণে ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। শুধু দাঁত নয় দাঁতের সমস্যার সমাধানে যত্ন নিতে হবে দাঁতের মাড়িও। ‍নিম্নে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার দেওয়ার হলোঃ

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যা খুবই কমন এবং অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যা মুখমুখি হয়ে থাকেন। যা আমরা উপেক্ষা করে দাঁতকে বড় সমস্যার দিকে ঠেলে দেই। এজন্য আমাদের জানা উচিত কেনো আমাদের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে, কি কি কারণে পড়ে। চলুন জানি দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণসমূহ-

দাঁত সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা: আমরা যখন খাবার খাই খাবারের কিছু অংশ আমাদের দাঁতের শেষের অংশে বা দুই দাঁতের মাঝে লেগে থাকে। এই খাবার জমে থাকার কারণে আমাদের দাঁতে সংক্রমন ঘটে। এতে করে দাঁতের চারিপাশে জীবানু বাসা বাঁধে। যা ধীরে ধীরে মাড়ি প্রধাহের সৃষ্টি করে এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে।

অনুপযোগী ব্রাশ বা জোরে ব্রাশ করা: আমাদের দাঁতের মাড়ি থেকে অন্যতম কারনগুলোর মধ্যে একটি হলো সঠিক ব্রাশ নির্বাচন না করা। নিম্নমানের ব্রাশগুলো সাধারণত অনেক শক্ত হয় যা দাঁত মাজার সময় মাড়িকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ব্রাশ করা এবং জোরে ব্রাশ করার কারণে ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে।

ভিটামিনের ঘাটতি: বেশ কিছু ভিটামিন রয়েছে যেগুলো ঘাটতির কারণে আমাদের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে থাকে। তারমধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে। ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি হতে পারে, একারণে মাড়ি থেকে রক্ত ও পড়তে পারে। এছাড়া ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, তাই ভিটামিন কে এর অভাবে ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহনে: যারা ধূমপান করেন বা তামাকজাত দ্রব্য ( গুল, পাতা) সেবন করেন তাদের দাঁতে চারপাশ ও মাড়িতে অনেক কালো কালো দাগ লক্ষ করা যায়। এই কালো দাগগুলো ধীরে ধীরে সংক্রমন সৃষ্টি করে এবং মাড়ির কার্যক্ষমতা রোধে কাজ করে। ফলে মাড়ি থেকে রক্ত পরে।

হরমোন পরিবর্তন: আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে হরমোন পরিবর্তন হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা গর্ভবতী হয়ে থাকে। এই হরমোন পরিবর্তন হওয়া অবস্থায় শরীর অনেকটা সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যা সাধারণ ব্রাশ করার সময় অল্প আঘাতে ও মাড়ি থেকে রক্ত ক্ষরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ধীরে ব্রাশ করুন।

এই সমস্যা গুলোর পাশাপাশি ডেন্টাল হাইজিন এর কারনে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। শেল ড্যামেজ রোদ এবং ক্ষতস্থান ছাড়ানোর কাজে এই ভিটামিন কাজ করে।

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার প্রতিকার
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া সমস্যার সমাধান আমরা সহজেই করতে পারি। সাধারণ ভাবে রক্ত পড়লে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়না। ঘরোয়া বা সাধারণ কিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করলে সহজেই দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার প্রতিকার পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু নিয়ম বা প্রতিকার তুলে ধরা হলো-

প্রতিদিন দুইবার নিয়ম করে দাঁত ব্রাশ করতে হবে এবং দাঁতের মাড়ি আলতো করে মাজতে হবে। দাঁতের মাড়িতে কখনই ব্রাশ দিয়ে জোরে ঘষা যাবে না। ব্রাশ ক্রয় করার সময় দেখে নিতে হবে ব্রাশটি আপনার দাঁতের জন্য উপযুক্ত কিনা। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ব্রাশ ক্রয় করুন। যাতে ব্রাশ অনেক সফট বা নরম হয়ে থাকে।

যাদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা রয়েছে তাদের মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো। তবে খেলে ভালো করে কুলকুচি করে মুখ ধুতে হবে। যাতে দাঁতে মিষ্টি জাতীয় কিছু না লেগে থাকে। মাঝে মাঝে ডাক্তারের কথামত ডেন্টাল ফ্লাস ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া যে কোন খাবার খেলেই মুখ ভালো করে কুলি করে ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

দুই থেকে তিন মাস পরপর ব্রাশ বদলে ফেলতে হবে। দাঁতের মাড়ি এবং দাঁত পরিষ্কার রাখতে লিকুইড মাউথ রিফ্রেশনার বা মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে নিতে হবে। নিজে থেকে কোন মাউথওয়াস বা রিফ্রেশনার ব্যবহারে আপনার দাঁতের ক্ষতি হতে পারে এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।

পর্যাপ্ত ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে। বিশেষ করে যেই খাবার গুলোতে ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি রয়েছে। দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায় নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ভিটামিন নিশ্চিত করুন। তেল চর্বি জাতীয় খাবার এবং চকলেট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। চকলেট দাঁতের ক্যাভেটির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
দন্ত ক্ষয় হওয়ার কারণ সমূহ

দাঁতের সমস্যার বা দাঁতে ব্যথার আরেকটা কারণ হলো দন্ত ক্ষয়। বর্তমানে দাঁত ক্ষয় হওয়া বা দাঁতের ছিদ্র হওয়া দাঁতের সমস্যার একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। শিশু, টিনেজার ও বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। দাঁতে ক্ষয় হয় মূলত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে।

ঘনঘন ড্রিংকস ও স্নাক্স খাওয়া, অনেক সময় যাবত দাতে খাবার লেগে থাকা, মুখের যেসব স্বাস্থ্য বিধি রয়েছে তা না মানা, মুখ ড্রাই থাকা, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্লোরাইড না থাকা এবং ক্ষুধামন্দার সমস্যা থাকলে দাঁতে ক্ষয় বা দাঁতে ছিদ্র হতে পারে।

দাঁতের ক্ষয় রোধের উপায়

দাঁতের মাড়ি সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি আমাদের উচিত দাঁতের ক্ষয় রোধের উপায় সমূহ চিহিৃত করা। দাঁতের ক্ষতি করে এই ধরনের খাবার গ্রহন না করা বা ব্যবহার না করা। পান ও গুল দাঁতের ক্ষয় সাধনে প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। অন্যান্য কারনে ও হতে পারে। তবে আমাদের উচিত দাঁত ক্ষয় হওয়ার কারণ চিহিৃত করা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করা। নিম্নে দাঁতের ক্ষয় রোধের উপায় দেওয়া হলো-

খাদ্য তালিকায় মিনারেল, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এর অভাব হলে এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে দাঁত ক্ষয়ের সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাবারে থাকা ফ্যাট সলিউবল প্রকৃতি দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকায় এই সকল খাবার রাখা জরুরি।

দাঁতের ক্ষয় রোধে প্রতিদিনের খাবারে শাক সবজির পাশাপাশি নারকেলের তেল, এভোকেড, বাদাম এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি খেলে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। রাসায়নিক উপাদান কম থাকে এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করা দাঁতের জন্য ভালো। ভেষজ উপাদানে তৈরি আয়ুর্বেদিক টুথপেস্ট ব্যবহারে দাঁতের ক্ষয় রোধ করা যায়।

নরম টুথব্রাশ দিয়ে সকালে এবং রাতে খাবার পরে ব্রাশ করতে হবে এছাড়া দাঁত ব্রাশ করার সময় জিহ্বা পরিষ্কার রাখতে হবে। এমনভাবে ব্রাশ করতে হবে যাতে খাবারের দানা দাঁতে না লেগে থাকে। মিষ্টি জাতীয় খাবার দাঁত ক্ষয়ের পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। তাই দাঁতের সমস্যা সমাধানে মিষ্টি জাতীয় খাবার কে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এই উপায় গুলো অনুসরণ করে দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করা যায়।

তীব্র দাঁতের ব্যথায় করণীয় - দাঁতের ব্যথা তীব্র হলে কি করবেন

দাঁতের সমস্যার আরো একটি বড় সমস্যা হলো দাঁতে ব্যথা হাওয়া। বিভিন্ন কারণে দাঁতে ব্যথা হতে পারে। যেমন; দাঁতের কোন গর্ত বা কারিজ হলে, দাঁতের ফিলিং খুলে গেলে, দাঁত ভেঙে গেলে, দাঁতের শ্বাস বা পালপ আক্রান্ত হলে দাঁতের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া নিয়মিত দাঁতের যত্ন না নিলে ও দাঁতের তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে।

ঠান্ডা খাবার অথবা গরম খাবার খাওয়ার আধাঘন্টা পর পর্যন্ত যদি দাঁতে ব্যথা স্থায়ী হয় তাহলে দাঁতে পালপ বা শ্বাস আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। এর ফলে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে স্নায়ু নষ্ট হতে। এই সময় পরে দাঁতের ব্যথা কমে যায়। আবারো যদি ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে নষ্ট কোষ সংক্রমিত হয়েছে বা পুঁজ সৃষ্টি হয়েছে।

এই দাঁতের সমস্যার জন্য ডেন্টিস্ট এর কাছে যাওয়ার আগে ভরা পেটে দুটি অ্যাসপিরিন বা একটি আইবুপ্রফেন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে লবণ তেল দিয়েও দাঁত মাজা যেতে পারে। হালকা গরম পানিতে সমান্য লবণ দিয়ে ১ ঘন্টা পর পর কুলকুচি করলেও দাঁঁতের তীব্র ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

দাঁতের ব্যথা দূর করার দোয়া - দাঁতের ব্যথায় যে দোয়া পড়বেন

মানুষের শরীরে ব্যথা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। এর মধ্যে দাঁতের ব্যথা মারাত্মক ও জটিল আকার ধারণ করে। দাঁতে ব্যথা মানুষের মস্তিষ্ক পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। যা সহ্য করা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। দাঁতের ব্যথা অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা কিছু খাওয়ার সময় লক্ষনীয় হয়। দাঁতে ব্যথার প্রকোপ শীতকালে আরো বেড়ে যায়।

দাঁতের ব্যথা থেকে শুরু করে অন্য ব্যথার দোয়া কোরআন ও হাদিসে দেওয়া রয়েছে। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে কিছু আমলের মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা উপশম করা যায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো মেসওয়াক করা। হযরত জিব্রাইল (আঃ) আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বারবার মেসওয়াক করার জন্য তাগিদ দিতেন। নিয়মিত মেসওয়াক করলে দাঁতের যাবতীয় রোগব্যাধি দূর হয়ে যায়।

দাঁতের ব্যথা মুক্ত করার জন্য কুরআনে একটি আমলও রয়েছে। কুরআনুল কারিমের এই আয়াতটি পড়লে দাঁতের ব্যথা আর থাকবে না। আয়াতটি নিচে দেওয়া হলঃ

'কুল হুয়াল্লাজি অংশাআকুম ওয়া ঝাআলালাকুমুস সামআ ওয়াল আবছারা ওয়াল আফয়িদাতা কালিলাম্মা তাশকুরুন।' [এটি সুরা মুলক এর ২৩ নাম্বার আয়াত]

আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিম উম্মাহকে এই আয়াতের আমলের মাধ্যমে দাঁতে ব্যথা নামক দাঁতের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দান করুন।

এই দোয়াটি পড়লে কেবল দাঁতের ব্যথাই নয়, অন্যান্য ব্যথা থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়। তবে কেবল মাত্র দোয়ার উপর নির্ভরশীল হবেন না। দোয়া করার পাশিপাশি চেষ্টা করুন দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করার। আল্লাহর রহমতে অতি দ্রুত দাঁতের ব্যথা থেকে রক্ষা পাবেন।

দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে করণীয় - গর্ভাবস্থায় দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন সমস্যা

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের দাঁতের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই এ সময় মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডেন্টিস্টদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় মুখের ভেতরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে করণীয়
মাড়ি ফুলে যাওয়া, বাড়ি থেকে রক্ত পড়া, দাঁতে ব্যথা হওয়া, দাঁতে পাথর পরা, দাঁতের গর্ত হওয়া, দাঁত নড়ে যাওয়া বা দাঁত পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় মাড়ির সমস্যা হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের মাত্রা অনেক পরিমাণে বেড়ে যায়। ফলে শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন হয় এবং মুখের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যে পরিবর্তন আসে। এর ফলে মাড়ি ফুলে যায় এবং দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ হতে পারে। ফলে দাঁতের মাড়ি দুর্বল হয়ে যায় এবং দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় চিনিযুক্ত খাবার বা শর্করা জাতীয় খাবার প্রবণতা বেড়ে গেলে দাঁতে ক্ষয়, দাঁতে প্লাক হওয়া, দাঁতে ক্যাভিটি বা দাঁতে গর্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়।

গর্ভাবস্থায় বমির এর সমস্যা হলে বমিতে থাকা এসিড দাঁতের ক্ষতি করে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিশুর মুখ এবং দাঁতে ব্যথা

অধিকাংশ শিশু মুখ এবং বিভিন্ন ধরনের দাঁতের সমস্যার কারণে কষ্ট পেয়ে থাকে। বিশেষ করে তারা দাঁতে ব্যথার কারণে খাবার চিবানোর সময় কান্নাকাটি করে থাকে। ছোট্ট শিশুটি ব্যাথার স্থান চিহ্নিত করতে পারে না। এক্ষেত্রে তার বাবা-মাকেই উদ্যোগী হয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রাথমিক অবস্থায় এর গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীতে তার জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সুতরাং ছোট্ট শিশুটি কোন কারণ ছাড়াই কান্নাকাটি করলে বা খাবার খেতে গেলে তার কোন অসুবিধা দেখা দিলে তার মুখের ভেতরটা ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। শিশুদের মুখ ও দাঁতে ব্যাথার অন্যতম কারণ গুলো নিচে দেওয়া হলো-
  • শিশুর দাঁতে ব্যাথার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাভিটি। ছোট্ট শিশুর দাঁতে ছোট অথবা বড় যে কোন ধরনের গর্ত দেখলেই বুঝতে হবে তার দাঁতে ব্যথায় কষ্ট হচ্ছে।
  • শিশুর দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে ও লাল রং হলেও ব্যথা হয়। এটি এক ধরনের প্রদাহ।
  • শিশুর মুখে জন্ম নেওয়া ব্যাকটেরিয়া বা এসিডের কারণে দাঁতের ওপরের শক্ত আবরণ বা এনামেল ক্ষয় হয়ে যেতে পারে ফলে শক্ত কোন জিনিসে কামড় দিলে এনামেল ফেটে যেতে পারে। এর ফলে দাঁতের শিরশিরে অনুভূতি হয় এবং ব্যথা হয়।
  • শিশুরা অনেক সময় ওপর এবং নিচের পার্টির দাঁত জোরে ঘষে। এতে যেমন দাঁত ব্যথা হয় তেমনি চোয়ালে ব্যাথা হতে পারে।
  • দুধ দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত উঠার সময় অনেক শিশুর মাড়ি ফুলে দাঁতে ব্যথা হয়।
  • কোন কারনে আঘাত পেয়ে দাঁত ভেঙে গেলে শিশুটা ব্যথা পেয়ে কষ্ট পায়।

শীতকালে দাঁত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে করণীয়

শীতকালে বিভিন্ন রোগের সাথে দাঁতের সমস্যা ও অনেকাংশ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে তাদের শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ায় দাঁত ব্যথা এবং দাঁত শিরশির করার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকে মুক্তি লাভ করার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল;

নাকের মাধ্যমে শ্বাস গ্রহণ করা, গরম পানিও পানে স্ট্রো ব্যবহার করা, চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, শীতের দিনে অধিক পরিমাণে রোদ পোহানো, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করা, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এক কাপ পানিতে মিশিয়ে কুলি করা, তবে খেয়াল রাখতে হবে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং পানির মিশ্রণ কোনভাবেই গিলে ফেলা যাবে না।

এছাড়া লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা উপশমে দারুণ উপকারী। এক ফুটন্ত গরম পানিতে এক চা চামচ পুদিনা পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা করে সেটা দিয়ে ৩০ সেকেন্ড কুলি করলে দাঁতের ব্যথা দূর হয়। এছাড়া হলুদ মেশানো এক গ্লাস দুধ খাওয়া যেতে পারে বা হলুদের গুড়ার সঙ্গে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত মাড়িতে দিলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের কি ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং দাঁতের মাড়ির সমস্যা সমাধান আমরা কিভাবে করবো? দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার কি। মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে দাঁত একটি। তাই আমাদের উচিত সবসময় ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী দাঁতের যত্ন নেওয়া এবং এ বিষয়ে সচেতন থাকা।

এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। এরকম তথ্যবহুল বা আপনার কাছে ভালো লাগা আরো অনেক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। এছাড়া শেয়ারের মাধ্যমে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url