বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, প্রত্যেক পিতা মাতারই বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবেন সে সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। আপনি যদি এই সম্পর্কে জানতে চান এবং জানার আগ্রহ থেকে এই আর্টিকেলের ভেতরে এসে থাকেন তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে আলোচনা করব।
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। এবং আরও জানতে পারবেন কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবেন এবং কারা একটি শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবে সহ বাচ্চাদের সাথে কতটা কোয়ালিটি টাইম যথেষ্ট এ সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম কিঃ
সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম বলতে মূলত সন্তানের সাথে তার পছন্দের কাজগুলো করা । এক কথায় সন্তানের সাথে গুণগত সময় কাটানো। বাবা মা যদি কোন সন্তানের সাথে তার পছন্দের কাজ করে বা খেলাধুলা করে যাতে বাচ্চাটি খুবই আনন্দিত থাকে এটাকেই সন্তানের জন্য কোয়ালিটি টাইম বলা হয়।
অনেকেই আবার সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম বলতে বুঝে সন্তান খেলনা নিয়ে খেলছে তার পাশে বসে থাকা। এবং সন্তান একরকম কাজ করছে মা বাবা অন্য কাজে ব্যস্ত এটা মোটেও কোয়ালিটি টাইম নয়। আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাবেন মানে আপনার পুরোপুরি মনোযোগ বাচ্চার দিকে থাকবে।
সেটা হতে পারে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, সন্তানের সাথে খেলাধুলা করা, শিশুর সঙ্গে ছবি আঁকা, সন্তানের পছন্দের খাবার একই সঙ্গে খাওয়া, গল্প করা বা মজার মজার গল্প শোনানো, সন্তানের সঙ্গে কোন পাজেল সলভ করা ইত্যাদি।
কোয়ালিটি টাইম বলতে দীর্ঘ সময় সন্তানের সঙ্গে কাটানো এমনটা নয় বরং খুবই সীমিত সময় । যে সময় আপনি আপনার বাচ্চার কথা এবং আচরণ মনোযোগ সহকারে উপলব্ধি করবেন এবং তার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবেন। আজকের আলোচনার মূল বিষয় বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ যা আপনারা পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন।
কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবেনঃ
অনেক অভিভাবকের মনে প্রশ্ন থাকে কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবো। চাকুরীজীবী বাবা মায়ের পক্ষে সব সময় বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অনেক কর্মব্যস্ত পিতা-মাতা জানতে চান কিভাবে এবং কতক্ষণ সন্তানের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে হয় । এজন্য আপনাকে জানতে হবে কোয়ালিটি টাইম মানে কি এবং কতক্ষণ কিভাবে সময় কাটালে সেটা সন্তানের জন্য টাইম হবে।
কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবেন সে সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। বাচ্চার সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম মানে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটানো নয়। এজন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময় যখন আপনি একদম ফ্রি থাকেন সেই সময়টাকে বাচ্চার সঙ্গে ১০-১৫ মিনিট মনোযোগ সহকারে কাটাতে হবে।
বাচ্চার সুবিধা অসুবিধার কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন। বাচ্চার কথা এবং কাজের গুরুত্ব দিন এবং ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করুন। যেন আপনার সন্তান বুঝতে পারে যে তারও একটি গুরুত্ব আছে এবং আপনি তাকে ভালবাসেন। কোয়ালিটি টাইম এর মধ্যে আপনি বাচ্চার সঙ্গে ছবি অংকন, গল্পের বই পড়া, বাচ্চার সাথে গল্প করা, বাচ্চার পছন্দের খাবার একসঙ্গে খাওয়া, একসঙ্গে বসে সিনেমা দেখা ইত্যাদি করতে পারেন।
তাছাড়া মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সঙ্গে ঘরে অথবা বাহিরে গিয়ে খেলা করুন এতে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটবে। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের পছন্দের জায়গা গুলোতে ঘুরতে নিয়ে যান। এতে বাচ্চারা অত্যন্ত খুশি হয় এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি পায়। একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের পড়াশোনার খবর নিন। সুবিধা অসুবিধার কথা শুনুন এবং সমাধান করার চেষ্টা করুন। আশা করি, কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবেন সে সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন।
বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণঃ
আমরা প্রত্যেকে পিতা-মাতা হিসেবে বাচ্চাদের যত্ন করি, খাবার খাওয়ায়, গোসল করাই, তাদের কথা শুনি সবকিছুই করে থাকি। কিন্তু কোয়ালিটি টাইম আবার কি কেন কাটাতে হবে বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম এই নিয়ে আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। বাচ্চাদের সাথে সারাদিন সময় কাটানো আর কোয়ালিটি টাইম কাটানোর মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে।
সারাদিন বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলা তাদের কথা শোনা যত্ন নেওয়া ইত্যাদি করলে সেটা কোয়ালিটি টাইম হয় না। একান্ত মনোযোগ দিয়ে বাচ্চার সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু সময় কাটানো এবং তাদের কথা শোনা এবং তাদের মতামত নেওয়ার নাম কোয়ালিটি টাইম। বিশেষ করে যে সকল পরিবার পিতা-মাতা কর্মজীবী এবং একক পরিবার সেই পরিবারের শিশুদের জন্য কোয়ালিটি টাইম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাচ্চাদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটালে মা-বাবা এবং সন্তানের বন্ধন শক্ত হয় সেই সঙ্গে শিশুদের মানসিক আচরণে উন্নতি হয়। একটি শিশু পিতা-মাতাকে অনুসরণ করে এবং অনুকরণ করে। আপনি বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটালে আপনার আচরণগত বৈশিষ্ট্য, নৈতিকতা , মূল্যবোধ ইত্যাদি আপনার শিশুর মধ্যে চলে আসে।
আপনার বাচ্চা এটা বুঝতে পারে যে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এর ফলে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। আপনি বাচ্চার সাথে ভালো আচরণ করলে বাচ্চা অন্যদের সাথে ভালো আচরণ করবে। বাচ্চাদের সাথে সময় কাটালে তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে এবং সমাধান করলে বাচ্চাদের অতিরিক্ত রাগ জেদ কমে যায়।
বাচ্চাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বললে এবং আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে তাদের চিন্তাশক্তি এবং বুদ্ধ বাড়বে। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে এবং গুরুত্ব দিলে তারাও আপনাকে গুরুত্ব দিবে। বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটালে বাচ্চারা অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি কমে যায়। বাড়ির বিভিন্ন কাজে বাচ্চাদেরকে যুক্ত করুন এবং ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করুন।
এভাবে বাচ্চাদের গঠনমূলক কাজ এবং খেলাধুলার মধ্যে ব্যস্ত রাখুন এতে বাচ্চারা মোবাইল স্কিন থেকে দূরে থাকবে। এক কথায় পিতা-মাতার জন্য বাচ্চার সাথে কোয়ালিটি টাইম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ তা আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এবার আসুন, কারা একটি শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কারা একটি শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবেঃ
প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেকেই হয়তো বা জানেন আবার অনেকেই জানেন না কে বা কারা একটি শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবে। শুধু যে পিতা-মাতায় একটি শিশুকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবে এমনটা নয়। শিশুর সঙ্গে কোয়ালিটির টাইম দিতে পারবে পিতা মাতা, ভাই-বোন, নানি ,দাদি বা বাচ্চার সমবয়সী বন্ধু বান্ধব।
বাচ্চার সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটানো মানে অনেক কিছু ব্যবস্থা করা বা অনেক টাকা পয়সা খরচ করা এমনটা নয়। কোয়ালিটি টাইম মানে বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটানো সে যেন সে সময়টাকে উপভোগ করতে পারে। সেটা হতে পারে খেলাধুলা, কোন শিক্ষনীয় বিষয়ে আলোচনা, পারিবারিক গল্প, ছবি আঁকা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বাচ্চার পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
তবে যেহেতু বাবা-মা একজন বাচ্চার সবথেকে কাছের এবং ভালো বন্ধু তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটালে শিশুরা সব থেকে বেশি খুশি থাকে। তাই হাজারো ব্যস্ততার মাঝে নির্দিষ্ট একটু সময় বের করে আপনার সন্তানদের সঙ্গে কোয়ালিটির টাইম কাটানো উচিত।
বাচ্চাদের সাথে কতটা কোয়ালিটি টাইম যথেষ্টঃ
আপনি সারাদিন বাড়ির বাহিরে থাকেন অথবা ভেতরে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট আপনার প্রত্যেকটা সন্তানদের জন্য কোয়ালিটি টাইম রেখে দিন। মনে করেন আপনার দুইটি সন্তান তার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে কোয়ালিটি টাইম এর ব্যবস্থা করতে হবে।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গল্প করা, খেলা, হাসির ঠাট্টা করা ইত্যাদি হতে পারে এবং একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের পড়াশোনার খবর নেওয়া , শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সঙ্গে তাদের কথোপকথন বা খেলাধুলার বিষয়ে কথাবার্তা হতে পারে।
কোয়ালিটি টাইম খুব অল্প একটি সময় যে সময় আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ আপনার বাচ্চার উপর থাকবে। এবং সেই সময়টুকুর মধ্যেই আপনাকে আপনার বাচ্চার সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান, বন্ধুত্ব এবং সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রতিদিন ১০- ১৫ মিনিট বাচ্চা সাথে কোয়ালিটি টাইম যথেষ্ট। তবে আপনি যদি এর থেকে বেশি সময় বাচ্চাদের কোয়ালিটি টাইম দিতে পারেন তাহলে সেটা আরো ভালো। আশা করি, বাচ্চাদের সাথে কতটা কোয়ালিটি টাইম যথেষ্ট সে সম্পর্কে আপনার অবগত হতে পেরেছেন।
লেখক এর মন্তব্যঃ বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন যে, বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিবেন। ছোট শিশুরা আপনার কাছ থেকে মনোযোগ চায়। কেননা এই সময়টাতে শিশুদের মানসিক বিকাশ ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে।
প্রত্যেক পিতা মাতারই একটি নির্দিষ্ট সময় বাচ্চাদের সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটানো অত্যন্ত জরুরী। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং বিশেষ কোনো মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।
আর আর ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url