এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা এবং এমআইটির সেরা সাবজেক্ট কোনটি

প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আপনাদের সামনে একটি নতুন টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। এমআইটিতে পড়ার স্বপ্ন অনেকের থাকে।এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা এবং এমআইটির সেরা সাবজেক্ট কোনটি সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। এমআইটি (Massachusetts Institute of Technology) বিশ্বের সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম একটি নাম। আমরা আজকে এই আর্টিকেলে এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা সহ এমআইটির সেরা সাবজেক্ট কোনটি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। তাছাড়া আপনার আরো জানতে পারবেন এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত, MIT এর পূর্ণরূপ কি,দ্বাদশ শ্রেণীর পর কি এমআইটিতে ভর্তি হওয়া যাবে, এমআইটিতে কিভাবে আবেদন করতে হয় সহ এমআইটিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। MIT সম্পর্কে সকল তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেল টিভি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত:

এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রযুক্তি ও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বিজ্ঞান ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সাইন্স এর ক্ষেত্রে । এমআইটি (MIT) Massachusetts Institute of Technology যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেস্ট রাজ্যের ক্যামব্রিজ শহরে বস্টন শহরের উপকণ্ঠে । এই শহরের কাছেই চার্লস রিভার নদীর তীরে অবস্থিত।

MIT এর পূর্ণরূপ কি:

MIT(Massachusetts Institute of Technology)। এটি বিখ্যাত প্রযুক্তি ও গবেষণা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। যা সুনামের সহিত প্রতিষ্ঠা লগ্নকালীন সময় থেকে এখন পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে আসছে ।

এমআইটির সেরা সাবজেক্ট কোনটি:

নিচের এমন কিছু সেরা সাবজেক্ট যা এমআইটিতে বিশ্ব সেরা তালিকায় আছে নিচে দেওয়া হলঃ
  • Electrical & Electronic Engineering
  • Computer Science
  • Mechanical Engineering
  • Physics
  • Mathematics
  • Economics
  • Aerospace & Engineering
তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে এমআইটি সব সময় বিজ্ঞান, তথ্য ও গবেষণা ভিত্তিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে যা সারা বিশ্বে এমআইটিকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
আর এমআইটির সবচেয়ে সেরা এবং বিখ্যাত সাবজেক্ট হচ্ছে,Computer Science & Artificial intelligence(CS&AI)।

বিশ্বের অনেক র‌্যাংকিং অনুযায়ী কম্পিউটার সাইন্স(CS) এমআইটির সবচেয়ে সেরা এবং শক্তিশালী সাবজেক্ট । এখানে ৩০ টির বেশি একাডেমিক বিভাগে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পড়ানো হয়, যেগুলো আবার পাঁচটি বড় বড় স্কুল বা কলেজের অধীনে বিভক্ত। তবে সব মিলিয়ে শতাধীক কোর্স বা সাবজেক্ট পড়ানো হয়। আশা করি, এমআইটির সেরা সাবজেক্ট কোনটি সে সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন।

দ্বাদশ শ্রেণীর পর কি এমআইটিতে(MIT) ভর্তি হওয়া যাবে:

এমআইটি তে ভর্তি হওয়া বা শিক্ষা লাভের জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পাস বাধ্যতামূলক নয়। তবে দ্বাদশ শ্রেণী পাস না করে অন্য কোন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সে পর্যায়ের সনদ থাকলেও আবেদন করা যায়। তবে অবশ্যই আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি একাডেমিকভাবে প্রস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য। 

এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্থাৎ যে সকল যোগ্যতার প্রয়োজন হয় সে সকল যোগ্যতা অর্জন করার পরেই এমআইটির জন্য আবেদন করতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমআইটি ভর্তি আবেদনে দ্বাদশ শ্রেণী পাস কেই সাধারণত ধরা হয়। এজন্যেই সব সময় দ্বাদশ শ্রেণী বা এইচ এস সি পাশের কথা বলা হয়।

তবে অধিকাংশ আবেদনকারী দ্বাদশ শ্রেণী পাস করার পর এমআইটিতে ভর্তি হয় কারণ তারা একাডেমিক প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে। আশা করি দ্বাদশ শ্রেণীর পর কি এমআইটিতে ভর্তি হওয়া যাবে সে সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।

এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা:

এমআইটি তে ভর্তির জন্য বিশেষ কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন। যা না হলে এমআইটি তে ভর্তি হওয়া যায় না। আপনি যদি এমআইটিতে ভর্তি হতে চান তাহলে নিম্নোক্ত যোগ্যতাগুলো অবশ্যই অর্জন করতে হবে।

একাডেমিক যোগ্যতা:
বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা এর মূল বিষয় হল আপনাকে এস এস সি এবং এইচ এস সি পরীক্ষায় A+ বা GPA 5.0 থাকা খুবই জরুরী । O Level এবং A Level শিক্ষার্থী দের ভালো থাকতে হবে।এছাড়াও ইংরেজী,পদার্থ,রসায়ন ও গণিতে ভাল দখল থাকা জরুরী।
এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা
এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস:
MIT তে ভর্তীর ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ভাল রেজাল্ট নয়,প্রব্লেম সল্ভিং স্কিল,লিডারশীপ,ইন্নভেটিভ আইডিয়া সহ নিম্নের বিষয় গুলোতে ধারণা থাকা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হবে যেমন,সমাজ সেবামূলক কাজ,বিজ্ঞান প্রজেক্ট গবেষণা ,যে কোন ধরণের প্রগ্রামিং, বিভিন্ন ধরণের অলিম্পিয়াড যেমন গণিত বা বিজ্ঞানে অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এমআইটি তে ভর্তির যোগ্যতা এর ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস কে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

স্ট্যান্ডার্ডাইজড:
এ ক্ষেত্রে SAT বা ACT আবশ্যিক । SAT এর ক্ষেত্রে ১৫০০+ হলে ভাল হয়। ACT তে ৩৩+ আদর্শ স্কোর হিসাবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশ থেকে এমআইটি তে কিভাবে ভর্তি হওয়া যায়:

বাংলাদেশ থেকে *এমআইটি (MIT)*-তে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। তবে সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভব। ছোটবেলা থেকেই স্কুলের খেলাধুলা এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কোন ভলেন্টিয়ার এর দায়িত্ব পেলে তা পালন করতে হবে। বিশেষ করে একাডেমিক রেজাল্টগুলো খুব ভালো করতে হবে। 

তাছাড়া গণিত,পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন ও ইংরেজিতে অত্যন্ত দক্ষতা থাকা অবশ্যক। যারা বাংলাদেশ থেকে এমআইটি তে ভর্তি হতে চাচ্ছেন তাদের ছোট থেকেই বিজ্ঞান মেলা, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড, ডিবেট ইত্যাদি এক্সট্রা কারিকুলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এমআইটি তে ভর্তির প্রস্তুতি একদিনের নয়। 

এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা ছোট থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। আপনি যদি এমআইটি তে ভর্তি হতে চান তাহলে সর্বপ্রথম ইংরেজি দক্ষতা এবং গণিত ও বিজ্ঞান চর্চা শুরু করুন। তারপরে SAT এবং TOEFL এর প্রস্তুতি নিন।আন্তর্জাতিক গণিত ও ফিজিক্স অলিম্পিয়াড এ অংশগ্রহণ করুন । বাংলাদেশ থেকে এমআইটিতে ভর্তি হতে গেলে এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

এমআইটি তে কিভাবে আবেদন করতে হয়:

MIT'র আবেদন প্রক্রিয়া একটু আলাদা,তারা কমন কোন অ্যাপ ব্যবহার করে না। আবেদনের জন্য নিজস্ব প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। আবেদনে নিম্নের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যাবে, https://apply.mitadmissions.org এমআইটি তে আবেদন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া(Application process for MIT)MIT তে আবেদন করার জন্য অনলাইনে ধাপে ধাপে কিছু কাজ করতে হবে। 

Application form পূরণ করা,MITর নিজস্ব আবেদন প্লটফ্রম আছে যেমন,MIT Application Portal; apply.mitadmissions.org এখানে Common app ব্যবহার হয়না ।এখানে একাউন্ট খুলে সকল তথ্য দিতে হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বলতে একাডেমিক রেকর্ডস (এসএসসি ও এইচএসসি বা এ লেভেলের মার্কশিট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট) যা অবশ্যই ইংরেজিতে অনুবাদ থাকতে হবে।

স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট স্কোর (SAT বা ACT স্কোর)। সাধারণত SAT স্কোর ১৫৭০ এবং ACT স্কোর ৩৬ থাকলে ভালো হয়।TOEFL বা IELTS স্কোর যা ইংরেজি দক্ষতা প্রমাণের জন্য কাজে লাগবে।Recommendation Letters ২ টি প্রয়োজন হবে।একটি ম্যাথ বা সাইন্সের শিক্ষক অন্যটি ইংলিশ বা অন্য কোন শিক্ষক Recommendation Letter দিবেন।পছন্দের কোনো বিষয় নিয়ে অনুচ্ছেদ লিখতে হবে ।

যেমন তোমার স্বপ্ন, তুমি কিভাবে সমস্যার সমাধান কর,কোন কোন বিষয় তোমার ভাল লাগে, মানবিক কিছু কাজ বা গল্প ,প্রগ্রামিং,ব্লগ,ওলিম্পিয়াড ,বিজ্ঞান বিষয়ক কোন প্রকল্প ইত্যাদি।আবেদন ফি কমপক্ষে ৭৫ ইউ এস ডলার । 

সম্পুর্ন ফ্রি পড়ার ও ব্যবস্তা আছে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে বাংলাদেশীদের জন্যই যা খুবই স্বাভাবিক।এখানে এডমিশন টাইপ দুই ধরনের, Early action এবং Regular action। সংক্ষেপে এমআইটি তে আবেদন করতে হলে যা যা করা লাগবেঃ
  • MIT ওয়েব সাইটে (অন লাইন ফর্ম পূরণ) ।
  • SAT/TOEFL/IELTS SCORE জমা ।
  • মার্ক সিট ও সার্টিফিকেট ইংরেজী ট্রান্স কিপ্ট ও জমা ।
  • রিকমেন্ডেশন লেটার ২ টি
  • পার্সোনাল প্রবন্ধ লিখন যে বিষয় সবচেয়ে ভাল পারে বা ভাল লাগে।
  • আর্থিক বিষয়ে আবেদন।
  • সময়মত জমা দান ।

এমআইটিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় :

এমআইটি তে স্কলারশিপ বা (Need Based Financial Aid) বলতে বুঝায় যদি কারও পরিবারের আয় কম হয় বা বছরে তিন থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে তাহলে এমআইটি পুরো খরচের দায়িত্ব নেবে। যদি কারো পরিবার একেবারে গরীব হয় তাহলেও সমস্যা নেই। থাকার খরচ, টিউশন ফি, এমনকি বইয়ের খরচ ও এমআইটি বহন করে। 

যেমন কারো বছরে আয় যদি $30,000এর কম হয় তাহলে সকল খরচই পাওয়ার যোগ্য হবে। এই টাকা কখনো ফেরত দিতে হয় না। সে ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার সময় আবেদন ফরমে বাৎসরিক আয় উল্লেখ করার সময় খুব দায়িত্বশীল হতে হবে। এখানে ভর্তির সুযোগ পাওয়াটাই বড় কথা, খরচ কোন বিষয় না।

বাংলাদেশ থেকে বহু ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপ পেয়ে লেখাপড়া করছে এবং অনেকে সফলতার সহিত শেষ করে এসেছে। আপনার যদি এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা থাকে তাহলে এমআইটিতে স্কলারশিপ পাওয়ার বিষয়টা অত্যন্ত সহজ হয়।

লেখক এর মন্তব্য: এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অবশ্যই এমআইটিতে ভর্তির যোগ্যতা সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। তাছাড়া এমআইটির সেরা সাবজেক্ট কোনটি সে সম্পর্কেও বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। এমআইটি তে ভর্তি হতে চাইলে নিজেকে ছোট থেকেই প্রস্তুত করতে হবে। 

পড়াশোনার পাশাপাশি সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা, কৌতূহল,চিন্তাশক্তি এবং উদ্ভাবনী মনোভাব তৈরি করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলে এমআইটিতে ভর্তি হওয়া শুধু স্বপ্ন নয় বাস্তবেও পরিণত হওয়া সম্ভব। 

আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি এমআইটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরে থাকেন তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। এরকম নতুন নতুন তথ্য পেতে সর্বদা আর আর ডায়েরি ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে বিশেষ কোন মতামত থাকতে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url