ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল সম্পর্কে জানুন
আল্লাহ তাআলা ব্যবসা কে হালাল করেছেন। সেজন্য ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল সম্পর্কে জানা ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ন। লেখাপড়া শেষ করে হাজার হাজার যুবক চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে দৌড়াই। অবশেষে তারা যখন ব্যর্থ হয়ে যায় তখন তারা শেষ সম্বল হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নেয়। তাই বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি সে সম্পর্কে জানা ও জরুরি।
আজকের এই আর্টিকেল জুড়ে আমরা জানাবো ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল সম্পর্কে, যা আমাদের ব্যবসাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। এছাড়া বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি এবং কেনো সে সম্পর্কে ও বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ভূমিকা
ব্যবসা এমন একটা পেশা যার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রহমত। ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য কিছু উপায় বা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তার মধ্যে ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল অন্যতম। আজকে ব্যবসা শুরু করে দিয়ে আজকেই অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায় না। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে বেকার যুব সমাজের সংখ্যা অনেক বেশি। এর মধ্যে অনেকেই চাকরির পিছনে দৌড়াদৌড়ি করে আজ ক্লান্ত। এসব বিভিন্ন কারণে প্রযুক্তির এই যুগে এখন চাকরির চেয়ে ব্যবসা করার ট্রেন্ডিং চলছে জোরালো ভাবেই।
ব্যবসা শুরুর আগে মনে রাখতে হবে, ব্যবসা করতে গেলে ঝুঁকি থাকবেই। তাই বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি তা জানা জরুরি। ব্যবসার সফল হওয়ার জন্য ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে। এছাড়া কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যায় সেজন্য ব্যবসা সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে এবং ব্যবসায় উন্নতি করার আমল সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়া একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণাবলী বা কি কি গুন থাকা উচিত? তা মেনে ধারন করতে হবে।
একজন সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস নামক গুন থাকতে হবে। যে যত আত্মবিশ্বাসী সে ব্যবসায়ী তত বেশি সফল। এছাড়াও অধিক পরিশ্রম করার মন মানসিকতা রাখতে হবে। কোন কারনে কাজের সফল না হতে পারলে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং অধিক মনোবল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল - ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়
একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য ব্যবসায় নিজের ক্যারিয়ার তৈরীর জন্য একজন মানুষকে ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল অবলম্বন করতে হয়। আর বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি তা জেনে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলে একজন ব্যবসায়ী তার জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবে। ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল উল্লেখ করা হলো-
১. নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা
ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য পরিকল্পনা থাকাটা আবশ্যক। পরিকল্পনা হতে হবে একেবারে নিখুঁত। পরিকল্পনায় বেশি অদল বদল করা কখনোই ব্যবসায় সফলতা এনে দিতে পারেনা। প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও পরবর্তীতে ব্যবসার স্বার্থে পরিকল্পনা বদলাতে হয় সেটা আলাদা কথা। তবে যারা সকল ব্যবসায়ী তারা ব্যবসা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেসিক পরিকল্পনাটা স্থির রাখে। সহজ ভাবে বলতে গেলে লক্ষ নির্ধারন করে ব্যবসার পরিকল্পনা সাজানো উচিত।
২. বিকল্প পরিকল্পনা রেডি রাখা
ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট হচ্ছে বিকল্প পরিকল্পনা। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে পূর্বের পরিকল্পনা অকেজ হয়ে পড়লে তখন কাজে আসবে বিকল্প পরিকল্পনা। আর তাই আগে থেকেই বিকল্প পরিকল্পনা রেডি রাখা উচিত। তাহলে সাময়িক ঘাটতি ব্যবসায় ব্যবসায় দেখা দিলে তা বিকল্প পরিকল্পনা পুষিয়ে নিতে পারে।
৩. ব্র্যান্ডিং করা
ব্যবসার ব্র্যান্ডিং করা একটি ব্যবসাকে দাঁড় করাতে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। ব্যবসাকে জনপ্রিয় করতে হলে অবশ্যই ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এমন অনেক কোম্পানি আছে যারা ব্যবসার একটি বড় অংশ রেখে দেয় ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য। আপনার ব্যবসা সম্পর্কে কেউ যদি নাই জানে তাহলে ব্যবসা সফল হবে কি করে? তাই ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই নিজের ব্যবসার ব্র্যান্ডিং মজবুত করতে হবে।
৪. প্রতিযোগী পর্যবেক্ষণ করা
ব্যবসার সফল হওয়ার জন্য ব্যবসা শুরুর আগেই সেই রিলেটেড ব্যবসার প্রতিযোগিতা বাজারে কেমন অবস্থানে আছে তা আগে থেকে চিহ্নিত করতে হবে। অন্যদের চাইতে নিজের ব্যবসাকে একধাপ এগিয়ে রাখতে প্রতিযোগীর পণ্য এবং আপনার পণ্যের মাঝে আলাদা হতে হবে। যদি প্রতিযোগীর পণ্য এবং আপনার পণ্য একই হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে প্রতিযোগীদের SWOT এনালাইসের সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা রাখতে হবে।
মানুষ অন্য পণ্য না ক্রয় করে আপনার পণ্য কেনো ক্রয় করবে তা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হবে।তাদের পণ্যের সাথে আপনার পণ্যের কি কম, কি বেশি রয়েছে এসব যাচাই-বাছাই করে আপনার ব্যবসাকে দাঁড় করাতে হবে। অন্যদের তুলনায় পণ্যের মান অবশ্যই ভালো রাখতে হবে। তবেই মানুষ আপনার পণ্য ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে। এভাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
৫. পছন্দমত ব্যবসা করা
আপনি যে ব্যবসাটি করতে পছন্দ করবেন বা আপনার জীবন যাপনের সাথে সেই ব্যবসাটি মানানসই, সেই ব্যবসাটিকে আপনার ব্যবসা হিসেবে নির্ধারন করতে হবে। কেননা আপনি যে ব্যবসাটি করতে সাছন্দ বোধ করেন, সেটা করলে আপনি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। এতে আপনি ব্যবসা উপভোগ করার পাশাপাশি আপনি হতে পারেন একজন সফল ব্যবসায়ী।
কিন্তু যে পেশা বা ব্যবসাতে আপনার আগ্রহ নেই বা আপনি মানিয়ে নিতে পারছেন না, সেই ব্যবসাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই অন্যদের কথা না শুনে আপনার পছন্দমত ব্যবসা শুরু করুন। তাহলে ব্যবসাতে অনেক বেশি সময় দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৬. মূলধন ঠিক করুন
আপনি যখন ব্যবসা করবেন বলে ঠিক করবেন তখন আপনার মাথায় রাখতে হবে আপনার কাছে কি পরিমাণ নগদ টাকা আছে। আপনার কাছে যে পরিমান অর্থ রয়েছে, সেই অর্থ দিয়েই ব্যবসা করার চেষ্টা করুন। ঋন করে ব্যবসা করা অনেকের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। ব্যবসা সঠিকভাবে দাঁড় করাতে না পারলে অর্থিক সংকোট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
তাই আপনার অর্থের পরিমান যদি অনেক কমও হয়, আপনি সেই অনুযায়ী ব্যবসা করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি চিন্তামুক্ত হয়ে ব্যবসা করতে পারবেন। কোন ব্যবসাই ছোট নয়। এই পৃথিবীতে যত সফল ব্যবসায়ী রয়েছে, তাদের অতীত থেকে দেখা যায় তারা অনেক ছোট থেকে ব্যবসা শুরু করেছিলেন আজ তারা সফল। তাই আপনি চেষ্টা করুন ঋন না করে, আপনার সাধ্যের মধ্যে ব্যবসা শুরু করার।
৭. গুণগত মান নিশ্চিতকরণ
নতুন ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই পণ্যের গুণগতমান ভালো হতে হবে। গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণ করে তাদের প্রতিশ্রুতি মতো পণ্য সরবরাহ করতে হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরি হবে। যা ব্যবসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন। চেষ্টা করুন গুণগত মান ঠিক রেখে পণ্য দিয়ে ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করুন। দেখবেন ক্রেতা আপনার ব্যবসাকে সফল করতে কাজে আসছে। পণ্য দিয়ে ক্রেতাকে মনযোগাতে পারলে, এই ক্রেতা পূনরায় আপনার নিকট আসবে।
৮. সময়োপযোগী হওয়া
প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের ব্যবসাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সময়ের সাথে নিজেকে এবং ব্যবসাকে মানিয়ে নিতে হবে। ব্যবসার সুবিধার্থে পরিবর্তনগুলির অভিযোগ না করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন কিছু খুঁজে বের করতে হবে। এতে করে আপনার ব্যবসার প্রচার প্রচারণা অনেক দূত হবে। তাই আপনি দূত সময়ের মধ্যে ব্যবসার সফল হতে পারেন।
৯. মার্কেট পর্যবেক্ষণ করা
ব্যবসার সফল হওয়ার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মার্কেট পর্যবেক্ষণ করা। অনেক বড় কোম্পানিগুলো দিকে লক্ষ করলে দেখবেন তারা মাঝে মাঝে মার্কেট সার্ভে করে থাকে। যা থেকে তারা মানুষের কাছ থেকে অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। তারা সেখানে বুঝতে পারে তাদের কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। আরে তথ্য উপাত্তের ভীতিতে তারা তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসকে আগের তুলনায় আরো উন্নত করে। আর এই জন্যই সেই কোম্পানিগুলো এত সুনামের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে মার্কেটে টিকে থাকে।
মার্কেট পর্যবেক্ষণ করতে হলে আপনার পণ্য সম্পর্কে আপনাকে বেশ গভীর জ্ঞান রাখতে হবে। কাস্টমারদের সাথে কিভাবে কথা বলবেন সে ব্যাপারেও আইডিয়া থাকতে হবে। এসব ব্যাপারে আপনার জ্ঞান যত বেশি হবে আপনি ব্যবসায় ততো বেশি সফল হবেন। আপনার ব্যবসা যেমনই হোকনা কেনো মাঝে মাঝে মাকের্ট সার্ভে করতে হবে। তাহলে আপনি আপনার ব্যবসার ভূলগুলো ঠিক করার সুযোগ পাবেন।
১০. বিনিয়োগে দূরদর্শিতা থাকা
ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য সময়ের সাথে সাথে বিনিয়োগের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ব্যবসায়ের সফলতা নির্ভর করে আপনার ব্যবসায় কতটুকু বিনিয়োগ করতে পারবেন তার ওপর। ব্যবসায় যা মুনাফা অর্জন হবে সেটা দিয়ে ব্যবসা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসার আয় ব্যয় সকল কিছুর সঠিক হিসাব রাখতে হবে।
প্রয়োজনে পুনরায় ইনভেস্ট কিংবা রিইনভেস্ট করার পরিকল্পনা হাতে রাখতে হবে। আপনার ব্যবসাকে আরও বেশি প্রসার করতে চাইলে চলমান বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিনিয়োগ ঠিক কোন মুহূর্তে করা উচিত সে সম্পর্কে আপনার আইডিয়া থাকতে হবে। আশা করা যায় ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য এমন পরিকল্পনা আপনাকে সাহায্য করবে।
বোনাস টিপস:
১. সোর্সিং ভালো হওয়া
একটি ব্যবসা ভালোর জন্য প্রোডাক্ট সোর্সিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা রেডিমেড প্রোডাক্টও হতে পারে আবার প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য কাঁচামাল ও হতে পারে। যে যত ভালো সোর্স খুঁজে বের করতে পারবে তার ব্যবসা তত বেশি সফল হবে। এখানে সোর্স বলতে বোঝানো হচ্ছে কোয়ালিটি প্রোডাক্ট কম খরচে ক্রয় করার সুবিধা। সোর্স ভালো হলে ব্যবসার মুনাফা বেশি করা যায়। আর স্বাভাবিকভাবে মনোভাব বেশি হলে ব্যবসা ভালো চলবে যা একজন ব্যবসায়ীকে সফল হতে সাহায্য করে।
২. অভিজ্ঞদের কাছে ব্যবসায়িক পরামর্শ নেওয়া
ব্যবসার শুরু করার সময় ব্যবসা নিবন্ধনের পাশাপাশি কিছু আইনি কাজ, কর এবং হিসেবের দিকেও নজর দিতে হয়। এগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া জরুরি।
৩. গ্রাহককে গুরুত্ব দেওয়া
ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য বেশি লভ্যাংশের চিন্তা না করে গ্রাহককে সেবা দেওয়ার বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে গ্রাহকের চাহিদা, তাদের পছন্দ-অপছন্দ এসব ব্যাপারে। গ্রাহকদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের স্যাটিসফাইট করতে পারলে ব্যবসার সফলতা আসবে ইনশাল্লাহ।
৪. কর্মচারীদের মোটিভেশন দেয়ার প্রচলন
জনবল ছাড়া ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করা যায় না। কর্মচারীদের ছাড়া একটা ব্যবসায়ের মালিক কখনোই ভালো ফলাফল আশা করতে পারে না। কর্মচারীরা যদি কাজের প্রতি আগ্রহী না থাকে তাহলে কখনোই ব্যবসায় ভালো করা সম্ভব নয়। কর্মচারীদের কাজে এনগেস্ট রাখার জন্য অবশ্যই মোটিভেশনাল অ্যাক্টিভিটি চলমান রাখতে হবে।
কর্মচারীদের কাজের এফ্রিসিয়েসন করতে হবে যেন তারা তাদের ওপর অর্পিত কাজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকে। তাদের মোটিভেশন বাড়ানোর জন্য ভালো অপরচুনিটি দিতে হবে। এভাবে ব্যবসা ধীরে ধীরে চালিয়ে যেতে পারলে একসময় সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি - সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কি
বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি তা নিদিষ্ট করে বলা মুশকিল। ব্যবসা সাধারণত নির্ভর করে আপনি কোন এলাকাতে বাস করে বা ব্যবসা কোথায় করতে চান। এছাড়া আপনি কি পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন বা আপনার মূলধন কত। আবার আপনার ব্যবসা করার মন মানসিকতা রয়েছে কিনা বা আপনি যে ব্যবসা করবেন তা আপনার মনোপযুগি কিনা।
এছাড়া যে পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা করতে চান তা আপনার এলাকায় বা কর্মস্থলে কেমন চাহিদা রয়েছে। বর্তমান সময় অনেক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক উন্নতি করছে। তাই আপনি যদি বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চান তাহলে এলাকা ভিত্তিক, পরিকল্পনামাপিক ব্যবসা শুরু করতে হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে পোশাক শিল্প। এটা শুধু বর্তমান সময়ের জন্য নয়, সবসময়ই এই ব্যবসা সবার উপরে থাকে। এরপর দ্বিতীয় লাভজনক ব্যবসা হলো ঠিকাদারি। বর্তমানে প্রচুর সরকারি কাজ হচ্ছে, সেগুলোর ঠিকাদার হতে পারলে প্রচুর লাভ করা যাবে। এছাড়াও বর্তমানের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে অন্যতম কিছু ব্যবসার নাম নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
- ট্যুর অপারেটর এর ব্যবসা।
- প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করার ব্যবসা।
- ফাস্ট ফুড বা রেস্টুরেন্টের ব্যবসা।
- পোল্টি বা গবাদি পশুর খামার।
- ফার্মেসি বা ঔষধের দোকান।
- ফ্রিল্যান্সিং বা আইটি সেবা।
- শুটকি ব্যবসা
- কৃষিভিত্তিক যে কোন ব্যবসা।
- রড সিমেন্ট এর ব্যবসা
- আবাসিক হোটেল এর ব্যবসা
- ড্রাগন ফল এর ব্যবসা।
কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যায় - কিভাবে একজন মানুষ উদ্যোক্তা হয়
একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য জন্য নিদিষ্ট কোন উপায় নেই। প্রতিটি উদ্যোক্তার ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা থাকে। সেরা ব্যবসায়ীক ধারণা ও ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কেবলমাত্র একটি সঠিক পরিকল্পনা করে আপনি ব্যর্থতার সম্ভাবনা কমাতে করতে পারেন। ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
এছাড়া ব্যর্থ হলেও সেখান থেকে নতুন কিছু শেখার মন মানসিকতা থাকতে হবে। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের থেকে পরামর্শ নিতে হবে এবং আপনাকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী। এই সবগুলো বিষয় একসাথে মানিয়ে চলা অনেকটা কষ্টসাধ্য। কেবলমাত্র সেই উদ্যোক্তারা সফল হয়ে থাকেন যারা এই সবগুলো বিষয় মেনে চলেন।
এমন পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত? যা বাজার চাহিদা অনেক বেশি কিন্তু বাজারে সেই পণ্য অনেক কম পাওয়া যায়। প্রাথমিক ভাবে অল্প পুজিতে ব্যবসা শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি যে পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করুন না কেনো গ্রাহকদের মতামতের আগ্রধীকার দিন। তারা যে ধরনের পণ্য বা সেবা চেয়ে থাকে, সে হিসেবে বড় পরিসরে শুরু করুন।
আপনার পণ্য সম্পর্কে গ্রহকদের বিস্তারিত বলুন। কেনো আপনার পণ্য অন্যদের থেকে আলাদা বা গ্রহকরা কেনো আপনার পণ্য ক্রয় করবে, সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিন। বিক্রি করার নতুন কৌশল বা মার্কেটিং করার পরিবেশ তৈরী করুন। সকল আয় এবং ব্যয়ের হিসাব রাখুন। যাতে মাস শেষে আপনার ব্যবসার লাভ বা ক্ষতির অংশ চিহিৃত করতে পারেন।
ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে ব্যবসা করার চেষ্টা করুন। প্রাথমিক অবস্থায় আর্থিক ঋন নিয়ে ব্যবসা করা থেকে বিরত থাকুন। ব্যবসা আয় উন্নতি শুরু হলে বা ব্যবসা স্থির হলে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠন বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্টান থেকে কম সুদে লোন নিতে পারেন।
ব্যবসাতে যেসকল আইনী কাঠামো রয়েছে সেগুলো নিবন্ধন করুন। তার মধ্যে রয়েছে একক মালিকানা বা শেয়ার। ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং অন্যান্য সেকল সরকারি আনুমোদন প্রয়োজন সেসকল অনমোদন নথি সংগ্রহ করুন। আপনার ব্যবসার নামে নিবন্ধন করুন। এছাড়া সরকারি ভ্যাট এবং ট্যাক্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং তা মেনে চলুন।
ব্যবসায় উন্নতি করার আমল - ব্যবসায় উন্নতি লাভের আমল
ব্যবসায় উন্নতি করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ব্যবসার মধ্যে হালাল হারামের পার্থক্য করা। এবং ব্যবসায় হারাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকা। ধোকা প্রতারণা, ওজনে কম দেওয়া এবং পণ্যের মধ্যে ভেজাল মিশ্রিত করা থেকে ব্যবসাকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ইসলামী মূলনীতি অনুসরণ করে ব্যবসা করলে আল্লাহ তা'আলা তাতে বরকত দান করেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, " সত্যবাদী, আমানতদার এবং বিশ্বাসী ব্যবসায়ীর কেয়ামতের দিন নবীগণ, সিদ্দিকগণ এবং শহীদদের সাথে থাকবেন"।
আলেমগণ ব্যবসায় উন্নতি করার জন্য একটি আমল উল্লেখ করেছেন তা হল- আগে পরে ১০০ বার দরুদ শরীফের সাথে ১০০ বার " ইয়া রাজজাকু" পাঠ করা। এছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত এবং বেশি বেশি দরুদ পাঠ করলে রুজিতে বরকত হয়।
একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণাবলী
কেবলমাত্র পুঁজি থাকলেই সফল ব্যবসায়ী হওয়া যায় না। একজন সফল ব্যবসায়ী হতে হলে কিছু আনকমন গুনাবলী ও মনোভাব। এই গুনাবলী ও মনোভাব আপনার ব্যবসাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখবে। এছাড়া আরো কিছু গুনাবলী রয়েছে যা প্রতিটি সফল ব্যবসায়ী মেনে চলে সেজন্যই আজ তারা সফল। চলুন জানি একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণাবলী কি কি হওয়া উচিত।
প্রথমত: একজন সফল ব্যবসায়ী হতে হলে লক্ষ নির্ধারন করতে হবে। আপনাকে জানতে হবে আপনি ঠিক কোথায় পৌঁছাবেন এবং কিভাবে সেই লক্ষ পর্যন্ত পৌঁছাবেন।
দ্বিতীয়ত: আপনাকে সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হতে হবে। নতুন ব্যবসা শুরু করতে বিভিন্ন সমস্যার মুখমুখি হতে হবে। আপনি যেকোন সমস্যাতে পড়তে পারেন। সেখানে অনেকটা শান্ত থেকে সেই সমস্যা সমাধান করতে হবে। সমস্যাকে চাপ হিসেবে না নিয়ে, চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করুন এবং এর সঠিক সমাধান নিজেই খুঁজে বের করুন।
তৃতীয়ত: ব্যবসা শুরু করতে আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আপনি ব্যবসা শুরু করা মানেই যে আপনি এক দিনে কোটিপতি হয়ে যাবেন, বিষয়টি এমন না। এখানে কঠোর পরিশ্রম করে নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে। ধৈর্য্য ধরে কাজ করা একজন সফল ব্যবসায়ীয় অন্যতম গুনাবলীর মধ্যে একটি। তাই ধৈর্য্য ধরে আপনার কাজে লেগে থাকুন।
চতুর্থ: আপনাকে অবশ্যই গ্রহকের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করার দক্ষতা ও মানসিকতা থাকতে হবে। কেবলমাত্র গ্রাহকই নয়, আপনার কর্মী থেকে শুরু করে বিনিয়োগ কারী, আপনার যোগানদাতা সহ আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেকটি মানুষের সাথে ভালো আচারনের সাথে সাথে তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
পঞ্চম: আপনি ব্যবসা শুরু করতে আপনার প্রধান গুনাবলী হবে আপনাকে সততা ও নৈতিকতার সাথে কাজ করা। এই সততা ও নৈতিকতাকে আপনার পুঁজি হিসেবে নিতে হবে। আপনার মাঝে সততা ও নৈতিকতা পরিলক্ষিত হলে গ্রহক থেকে শুরু করে সকলের কাছে আপনার গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
ষষ্ঠ: ব্যবসা শুরু করতে আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী। এছাড়া যেকোন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নেওয়ার মন মানসিকতা থাকতে হবে। আপনার নিজেস্ব চিন্তা ভাবনা গুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সাথে সাথে আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আপনার চিন্তা ভাবনা গুলো সঠিক হতে হবে এবং তার প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে।
লেখকের শেষ মন্তব্য: ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল
একটি ব্যবসা দাড় করানো এবং খুব দ্রুত সাফল্য বয়ে আনা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। ধৈর্য, এক নিষ্ঠতা এবং অধ্যবসায় ও নিয়মানুবর্তিতা সাফল্যের পূর্ব শর্ত। তাই চেষ্টা করুন ব্যবসায় সফল হওয়ার ১০টি কৌশল মেনে বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি তা নির্বাচন করে ব্যবসা শুরু করার। সফলতা একদিনেই আসে না বরং অনবরত প্রচেষ্টা ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের ফলে সফলতা আসে। আশা করছি উপরের কৌশল গুলো অবলম্বন করলে আপনি ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
এতক্ষণ ধরে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল ও আপনার ভালো লাগে এমন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন। এছাড়া শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url