বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ,কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আশা করি, আপনারা সকলে ভালো আছেন। আজ এই আর্টিকেলে একটি নতুন টপিক নিয়ে আলোচনা করব। বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ এবং বর্ণান্ধতা রোগের কারণ কি সে সম্পর্কে আলোচনা করব। বর্ণান্ধতা (colour blindness) দৃষ্টিশক্তি জনিত একটি সমস্যা। কালার ব্লাইন্ড সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাছাড়া আপনারা আরো জানতে পারবেন বর্ণান্ধতা রোগের কারণ কি, বর্ণান্ধতা রোগের লক্ষণ, বর্ণান্ধতা রোগের প্রতিকার, মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বর্ণান্ধতা বেশি দেখা যায় কেন,কোন ভিটামিনের অভাবে বর্ণান্ধতা হয়, কালার ব্লাইন্ড পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত।
বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ :
বর্ণান্ধতা (colour blindness) এক ধরনের দৃষ্টিশক্তি সমস্যা। আমাদের চোখের বিশেষ করে তিনটি কোন কোষ (cone cell) থাকে যা মৌলিক রং গুলো শনাক্ত করতে পারে যেমন - লাল, সবুজ ও নীল। আমাদের চোখের রেটিনার এই তিনটি কোন কোষের একটি ঠিকমতো কাজ না করলে এই রংগুলো চিনতে সমস্যা দেখা যায়। এটাই মূলত কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধতা।
এটি সাধারণত জিনগত সমস্যা। বংশে কারো বর্ণান্ধতা ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে এই সমস্যা দেখা দেয়।এই সমস্যাটি সাধারণত x ক্রোমোজোম এ হয়ে থাকে।বর্ণান্ধতা বিশেষ করে পুরুষদের বেশি হয় কেননা পুরুষদের মাত্র একটি x ক্রোমোজোম থাকে। এই সমস্যা হলে কিছু নির্দিষ্ট রংয়ের বা অন্যান্য যে কোন রংয়ের পার্থক্য বা ঠিকমতো চিনতে পারেনা।
যারা কালার ব্লাইন্ড তাদের সাধারণত লাল ও সবুজ রঙের পার্থক্য বুঝতে বেশি সমস্যা হয়। বর্ণান্ধতা সাধারণত তিন ধরনের লাল সবুজ,নীল-হলুদ এবং সম্পূর্ণ বর্ণান্ধতা (Achromatopsia)। তবে সম্পূর্ণ বর্ণান্ধতা খুব কম দেখা যায়। বিশেষ করে লাল-সবুজ বর্ণান্ধতার সংখ্যায় বেশি। আশা করি, বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ সে সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পেরেছেন।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বর্ণান্ধতা বেশি দেখা যায় কেন :
প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেকের মনে এই প্রশ্ন থাকে যে মহিলাদের চেয়ে পুরুষের বর্ণান্ধতা বেশি দেখা যায় কেন। এর প্রধান কারণ হলো জিনগত পার্থক্য। সাধারণত এই সমস্যাটি যেই জিনে তৈরি হয় সেটি x ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। আর আমরা সবাই জানি, নারীদের দুইটি x ক্রোমোজোম থাকে এবং পুরুষদের একটি x ক্রোমোজোম থাকে।
নারীদের ক্ষেত্রে একটি x ক্রোমোজোমের সমস্যা হলে অন্য আরেকটি x ক্রোমোজোম দিয়ে তা রিকভারি করতে পারে। কিন্তু পুরুষদের যেহেতু একটি x ক্রোমোজোম থাকে তাই এটিতে সমস্যা হলে তারা বর্ণান্ধতায় আক্রান্ত হয়। প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে প্রায় ৮ জন বর্ণান্ধতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ জনে মাত্র একজন এতে আক্রান্ত হন। আশা করি, মহিলাদের চেয়ে পুরুষের বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এবার আসুন বর্ণান্ধতা রোগের কারণ কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বর্ণান্ধতা রোগের কারণ কি :
প্রিয় পাঠক, বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ সে সম্পর্কে আমরা জেনেছি। কিন্তু বনান্ধতা কেন হয় সে সম্পর্কে আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। নিচে বর্ণান্ধতা রোগের কারণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
জেনেটিক কারণ :
বর্ণান্ধতা সাধারণত জেনেটিক বা বংশগত সমস্যা। আমাদের চোখের বিশেষ তিনটি (cone cell) যা, লাল নীল সবুজ এই তিনটি মৌলিক রং সনাক্ত করতে পারে। জেনেটিক কারণে এ এই কোষ গুলো ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে সাধারণত কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধতা দেখা দেয়। এই জিনটি x ক্রোমোজোম এ থাকে। আর পুরুষদের যেহেতু একটি মাত্র x ক্রোমোজোম থাকে সেহেতু এই সমস্যাটি পুরুষদের ক্ষেত্রে অধিক দেখা যায়।
চোখের বিভিন্ন রোগের কারণ :
তাছাড়া চোখের বিভিন্ন রোগের কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। যেমন দীর্ঘদিন ডায়বেটিসের ফলে চোখের চোখের রক্ত না লিখ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই কোন কোষ গুলো কাজে ব্যাহত হয়। বয়স জনিত কারণে চোখের রেটিনার একটি অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও রঙ চিনতে সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া চোখের ভিতরে চাপ বেড়ে গেলে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে চোখের রং চেনার ক্ষমতা কমে যায়।
চোখে আঘাত বা রেটিনার ক্ষতি :
কোন অ্যাক্সিডেন্ট জনিত কারণে চোখে মারাত্মকভাবে আঘাত পেলে যদি চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড দেখা দেয়।
তীব্র আলো বা রেডিয়েশনর ক্ষতি :
দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র আলো বা আল্ট্রাভায়েলেট রশ্মি চোখে এসে পড়লে চোখের cone সেল হতে পারে যার ফলে চোখে রং চেনার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :
এমন কিছু ঔষধ আছে যা দীর্ঘমেয়াদি খাওয়ায় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে রং চিনতে সমস্যা হতে পারে। এন্টিবায়োটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধগুলো দীর্ঘমেয়াদি খাওয়া বর্ণান্ধতা রোগের কারণ হতে পারে।
অপুষ্টি বা ভিটামিনের ঘাটতি :
ভিটামিন এ, ই এবং বি ১২ এর ঘাটতি বর্ণান্ধতার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে দরিদ্র এবং দীর্ঘমেয়াদি দুর্বল এবং পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে।
বার্ধক্য জনিত কারণ :
তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের ক্ষমতা কমে যায় এবং রং চেনার ক্ষমতা ও কমে যায়। বার্ধক্য আরেকটি বর্ণান্ধতা রোগের কারণ।
বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড এর লক্ষণ :
বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড এর কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার কালার ব্লাইন্ড এর সমস্যা রয়েছে। সর্বপ্রথমে আপনাকে জানতে হবে বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ। সাধারণত রং চিনতে সমস্যা হওয়া বা রং এর মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাটাই বর্ণান্ধতার সমস্যা। কালার ব্লাইন্ড এর বিশেষ বিশেষ লক্ষণগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- সবচেয়ে প্রধান লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট কিছু কালারের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা। যেমন লাল, নীল, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি কালার গুলোকে একই রকম দেখা এবং এই কালার গুলো চিনতে না পারা।
- বিশেষ করে রঙ চিনতে ভুল করা। যেমন ধরুন, সবুজ দিয়ে রং করতে গিয়ে হলুদ রং দিয়ে রং করা। এ সমস্যা বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আঁকাআঁকির সময় পরিলক্ষিত হয়।
- রং দিয়ে নির্দেশনা যেমনট ট্রাফিক লাইট, সিগনাল অথবা পোশাক ও জুতার রং মেলাতে সমস্যা হওয়া।
- অনেক সময় অনেকগুলো রং আলাদা করতে গিয়ে চোখের উপর চাপ পড়া বা মাথাব্যথা হওয়া।
- বিশেষ করে রাতের বেলায় অল্প আলোতে রং চিনতে সমস্যা হওয়া। কেননা যারা বর্ণান্ধতায় ভুগছেন তারা রাতের বেলা সবকিছু ধূসর ও অস্পষ্ট দেখতে পান।
- মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপের রঙিন গ্রাফিক্স কে অস্পষ্ট দেখা কালার ব্লাইন্ডের একটি লক্ষণ।
- কালার আইডেন্টিফাই করতে সমস্যা যেমন দুইটি সম্পূর্ণ আলাদা রং নীল ও বেগুনি কে একই মনে হওয়া।
বর্ণান্ধতা রোগের প্রতিকার :
বর্ণান্ধতা (colour blindness) সাধারণত বংশগত সমস্যা যা একেবারে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে যা এর ঝুঁকি কমায় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড রোগের প্রতিরোধে করণীয়ঃ
জন্মগত বর্ণান্ধতা প্রতিরোধে করণীয় :
জেনেটিক বা বংশগত বর্ণান্ধতা সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা যায় না। তবে কারো বংশ যদি বর্ণান্ধতার ইতিহাস থাকে তবে সন্তান নেওয়ার পূর্বে জেনেটিক কাউন্সিলিং নেওয়া যেতে পারে। যদি কোন মা জানেন যে তার এক্স ক্রোমোজোম ত্রুটি রয়েছে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এর কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হতেও পারে।
অর্জিত বর্ণান্ধতা প্রতিরোধে করণীয় :
বয়স শারীরিক রোগ বা কোন ওষুধের কারণে যদি বর্ণান্ধতা হয় তাকে অর্জিত বর্ণান্ধতা বলে যা কিছু সতর্কতা অবলম্বনে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। চোখের যত্ন নিতে হবে। পুষ্টিকর খাওয়া দাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, সানগ্লাস ব্যবহার করে চোখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি বর্ণান্ধতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিষাক্ত রাসায়নিক ও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ থেকে বিরত থাকেন।
কোন ওষুধ দীর্ঘমেয়াদী খাওয়ার পূর্বে এর সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে জেনে নিন এবং সতর্ক থাকুন। ডায়াবেটিস ও গ্লুকোমার মত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। কেননা এ সকল রোগ থেকেও চোখের রঙের সমস্যা হতে পারে। বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞর কাছে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। কেননা যদি কালার ব্লাইন্ডের সমস্যা হয় তাহলে অতি দ্রুত ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা নেওয়া যায়।
কোন ভিটামিনের অভাবে বর্ণান্ধতা হয় :
বর্ণান্ধতা রোগের কারণ কি সে সম্পর্কে আমরা উপরোক্ত আলোচনায় ব্যাখ্যা করেছি। বর্ণান্ধতা সাধারণত বংশগত বা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। তারপরও কিছু ভিটামিনের অভাবে এই সমস্যা দেখা দেয় (অর্জিত বর্ণান্ধতা)। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে ঘটে এবং অস্থায়ী। যে সকল ভিটামিনের অভাবে বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ডের সমস্যা হয় সেগুলো হল ভিটামিন এ, বি১২, ভিটামিন ই, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন সি ইত্যাদি।
আমরা অনেকেই জানি ভিটামিন এ চোখের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এটি চোখের রেটিনার আলো ও রং অনুভব করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা দৃষ্টি দুর্বলতা এমনকি রং চেনার ক্ষমতার হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন এ এর ভালো উৎস ছোট মাছ, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, কলিজা, দুধ, ডিম ইত্যাদি।
এই খাবারগুলো নিয়মিত গ্রহণ করলে ভিটামিন এ এর ঘাটতি পূরণ হয়। চোখের অপটিক নার্ভের সাথে সম্পর্কিত ভিটামিন বি ১২ নার্ভ ও রক্তকণিকার উন্নত করে। ভিটামিন বি টুয়েলভ এর অভাবেও বর্ণান্ধতা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি ১২ এর ভালো উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই। ভিটামিন ই এর অভাবে আমাদের চোখের রেটিনার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভিটামিন ই আমাদের চোখের কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে বাঁচায়।বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, ভুট্টার তেল,পেঁপে ইত্যাদিতে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। নিয়মিত সকল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তাছাড়া ভিটামিন সি আমাদের শরীরের নানা উপকার করে।
তার মধ্যে আমাদের চোখের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি এর অভাবেও অনেক সময় বর্ণান্ধতা সমস্যা হয় তবে খুব কম। আশা করি, বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ এবং কোন ভিটামিনের অভাবে বর্ণান্ধতা হয় সে সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।
কালার ব্লাইন্ড পরীক্ষা :
বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে কালার ব্লাইন্ড পরীক্ষা করা হয়। নিচে বেশ কিছু টেস্টের নাম এবং কিভাবে টেস্ট করা হয় টেস্টের পদ্ধতি আলোচনা করা হলোঃ
ইশিহারা টেস্ট :
কালার বাইন্ড টেস্ট করতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজ পদ্ধতি ইশিহারা টেস্ট। যা লাল ও সবুজ বর্ণান্ধতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। রঙিন রঙিন কতগুলো বিন্দু দিয়ে চক্রাকার ছবি যার মধ্যে দিয়ে সংখ্যা ও পথ দেওয়া থাকে। যাদের কালার ব্লাইন্ড এর সমস্যা আছে তারা এই সংখ্যা বা পথ চিনতে পারেনা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্যা আছে কিনা তা বোঝা যায়।
আনমালোস্কোপ টেস্ট :
বর্ণান্ধতার ধরনও মাত্রা পরিমাপের জন্য এই টেস্ট করা হয়। বিশেষ করে লাল-সবুজ বর্ণান্ধতার ক্ষেত্রে এটি একটি কার্যকর ও নির্ভুল পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে একটি স্ক্রিনে রং মিশিয়ে নির্দিষ্ট রং বানাতে দেওয়া হয়। যদি রং সঠিকভাবে মিলাতে না পারে তাহলে সমস্যার ধরা পড়ে। এই পরীক্ষা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে করানো হয়ে থাকে।
ফার্নওয়ার্থ এম-১০০ টেস্ট :
রং চেনার সূক্ষ্ম ক্ষমতা নির্ণয়ে এটি ব্যবহৃত হয়। সেখানে ১০০ টি রংয়ের শেড থাকে রোগীকে হালকা থেকে গাড়ো বা নির্দিষ্ট অনুক্রমে সাজাতে বলা হয়। রোগী রং সাজাতে ভুল করলে নির্ণয় করা যায় কোন রঙের সমস্যা আছে। সাধারণত এভাবেই পরীক্ষাটি করা হয়।
হার্ডি রানডল রিটলার (HRR) টেস্ট :
এই টেস্টের মাধ্যমে লাল-সবুজ ছাড়াও নীল-হলুদ ইত্যাদি রঙের বর্ণান্ধতা টেস্ট করা হয়। এটি ইশিহারার মতো কিন্তু আরো অনেক বিস্তৃত রং ব্যবহার করা হয়।এই টেস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন রঙিন চিত্র ও চিহ্ন রোগীকে বের করতে বলা হয়।
বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ড সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ):
১. প্রশ্ন : কালার ব্লাইন্ডনেস কি?
উত্তর : কালার ব্লাইন্ডনেস বা বর্ণান্ধতা হলো চোখের রেটিনায় থাকা রং সংবেদনশীল কোষ (কোন সেল) এর সমস্যার কারণে ঠিকভাবে রং চেনার অক্ষমতা।
২. প্রশ্ন : লাল বর্ণান্ধতা কে কি বলে?
উত্তর : লাল বর্ণান্ধতা অপর নাম প্রোটানোপিয়া (Protanopia)। যাদের এই সমস্যা আছে তারা লাল রং শনাক্ত করতে পারেনা।
৩. প্রশ্ন : সবুজ বর্ণান্ধতা কে কি বলে?
সবুজ বর্ণান্ধতার অপর নাম ডিউটারানোপিয়া (Deuteranopia)। যাদের এই সমস্যা আছে তারা সবুজ রং শনাক্ত করতে পারেনা।
৪. প্রশ্ন : সব কালার ব্লাইন্ড মানুষরা কি সাদা কালো দেখে?
উত্তর : না, খুব অল্প সংখ্যক মানুষই একেবারে সাদা-কালো দেখে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট রং যেমন লাল-সবুজ বা নীল-হলুদ এই রংগুলো চিনতে সমস্যা হয়।
৫. প্রশ্ন : বর্ণান্ধতা কি বংশগত?
উত্তর : হ্যাঁ, বর্ণান্ধতা মূলত বংশগত। তবে বিভিন্ন রোগের কারণে, চোখে আঘাতপ্রাপ্ত কারনে,ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, পুষ্টিকর খাবার ও ভিটামিনের অভাবে ও বর্ণান্ধতা হয়ে থাকে।
৬. প্রশ্ন : জন্মগত বর্ণান্ধতা কি প্রতিরোধ করা যায়?
উত্তর : না, জন্মগত বর্ণান্ধতা একেবারে নিরাময় যোগ্য নয়। তবে চশমা ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রং চিনতে সহায়তা করা যায়।
৭. প্রশ্ন : বর্ণান্ধতা কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর : বর্ণান্ধতা প্রধানত তিন প্রকার যথা :
- রেড -গ্রীন (লাল- সবুজ) বর্ণান্ধতা
- ব্লু- ইয়োলো (নীল- হলুদ) বর্ণান্ধতা
- সম্পূর্ণ বর্ণান্ধতা (Achromatopsia)
৮. প্রশ্ন : পিতা স্বাভাবিক ও মাতা বর্ণান্ধ হলে ছেলেগুলো কি হবে?
উত্তর : যেহেতু পিতা স্বাভাবিক অর্থাৎ (xy) ক্রোমোজোম স্বাভাবিক। এবং মাতা বর্ণান্ধ অর্থাৎ (xx) ক্রোমোজোম দুটোই বর্ণান্ধ। অতএব মেয়ে হলে বাবার স্বাভাবিক x ক্রোমোজোম মায়ের বর্ণান্ধ x ক্রোমোজোম পাবে অর্থাৎ মেয়ে হবে বাহক। আর ছেলে সন্তান হলে পিতার y ক্রোমোজোম এবং মায়ের বর্ণান্ধ x ক্রোমোজোম পাবে অর্থাৎ ছেলে হবে বর্ণান্ধ।
লেখক এর মন্তব্য : বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ
প্রিয় পাঠক, পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা এতক্ষণে অবগত হতে পেরেছেন বর্ণান্ধতা কি ধরনের রোগ এবং বর্ণান্ধতা রোগের কারণ কি সে সম্পর্কে। বর্ণান্ধতা একটি বংশগত রোগ। সাধারণত জিনগত কারণে এই রোগ হয়। জেনেটিক কারণে বর্ণান্ধতা প্রতিকার করা যায় না তবে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে চলার পথে সহায়তা পাওয়া যায়।
বর্ণান্ধতা রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জেনে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এই রোগের ক্ষতি কিছুটা এড়ানো যায়। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোন বিশেষ মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url