সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায়
প্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে স্মার্টফোন মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্মার্টফোনের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব ও রয়েছে। আর এই নেতিবাচক প্রভাব সব থেকে আপনার সন্তানদের ওপর বেশি পড়ছে। কেননা শিশুরা সব থেকে বেশি মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে যায়। আর প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত সন্তানদের মোবাইল আসক্তি থেকে বের করে আনা এবং সুস্থ রাখা।
পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাছাড়া শিশুদের মোবাইলে আসক্তির কারণ, শিশুদের মোবাইল আসক্তি কুফল, ছাত্র জীবনে মোবাইলের অপকারিতা এবং বাচ্চাদের স্মার্টফোন আসক্তি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ভূমিকা : সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায়
বর্তমান প্রজন্ম জন্ম থেকেই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বেড়ে উঠছে। প্রযুক্তির এই সুবিধাগুলো যেমন আমাদের উপকার করে তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের ওপর এর প্রভাব অনেকটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যাপারটা অভিভাবকদের যেন একটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্মার্টফোনে অতিরিক্ত আসক্তি আপনার সন্তানের পড়াশোনা, ঘুম, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে ভারসাম্য রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা এমন সহজ কিছু কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপনার সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হবে।
শিশুদের মোবাইলে আসক্তির কারণ :
বর্তমান সময় বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইলে আসক্তির কারণ হিসেবে আমরা অনেক কিছুকে দায়ী করে থাকি। বর্তমান প্রযুক্তির দুনিয়ায় মোবাইল ফোনের উপর মানুষ পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। আর শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্ত হওয়া যেন এক মহামারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের মোবাইলে আসক্তির কারণ সম্পর্কে আমাদের সকলের অবগত থাকা উচিত। নিচে বেশ কিছু কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- বর্তমানে বিনোদনের জন্য সব থেকে সহজ উপায় মোবাইল ফোন। মোবাইলে ইউটিউব ভিডিও, কার্টুন, গেম ইত্যাদি খুব সহজে বাচ্চাদের আনন্দ দেয় এবং আকৃষ্ট করে।
- উন্নত গ্রাফিক্স, সাউন্ড সিস্টেম এবং দ্রুত চলার দৃশ্যগুলো ছোট বাচ্চাদের মনোযোগ কাড়ে। যার ফলে তারা দীর্ঘ সময় স্মার্টফোনে ব্যস্ত থাকে।
- বিভিন্ন গেম বা ভিডিওর মাঝে বিভিন্ন রকম আনন্দদায়ক দৃশ্য এবং রিওয়ার্ড থাকে যা বাচ্চাদের আনন্দের অনুভূতি দেয় এবং আসক্ত হয়ে পড়ে।
- অনেক সময় অভিভাবকদের ব্যস্ততার কারণে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দেওয়া হয়। যা শিশুদের মোবাইলে আসক্তির কারণ হতে পারে।
- তাছাড়া পরিবারের সকল সদস্য মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকলে বাচ্চারাও তা অনুসরণ করে। এর ফলেও বাচ্চারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে যায়।
- অনেক সময় ছোটবেলায় বাচ্চাকে খাওয়ানো এবং ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে সেটা আসক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
- বর্তমানে প্রত্যেকটা বাসায় স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় খুব সহজে বাচ্চারা মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
- নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম নির্ধারণ না করায় বাচ্চারা দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার করে ফলে আস্তে আস্তে মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়ে।
- বন্ধুবান্ধব বা আশেপাশের বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার দেখে অন্য বাচ্চারা মোবাইলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।এটি একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় :
বর্তমান সময়ে বিশেষ করে শিশুরা অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। যা একটি শিশুর চোখের স্বাস্থ্য এবং আচরণে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্যই অভিভাবক হিসেবে আমাদের উচিত সন্তানদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। নিচে আপনার সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার সহজ ৮ টি টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম নির্ধারণ করুন :
আপনার সন্তানের স্মাটফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় হলো সময় নির্ধারণ করে দিন। কখন এবং কতক্ষণ সে ফোন ব্যবহার করতে পারবে সেই নিয়ম নির্ধারণ করুন। যেমন, ধরুন সারাদিনে ১ ঘন্টা ফোন ব্যবহার করতে পারবে এবং সন্ধ্যার পর থেকে ফোন ব্যবহার করতে পারবে না কিছুটা এরকম। সব থেকে ভালো হয় আপনার সন্তানকে ছোট থেকে রুটিন অনুসরণ করতে শেখান।
Parental control App ব্যবহার করুন :
বর্তমানে এমন কতগুলো অ্যাপ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি নিজের মোবাইল থেকে বাচ্চার মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনার সন্তান কোন অ্যাপ গুলো ব্যবহার করছে এবং কতক্ষণ ধরে ব্যবহার করছে যাবতীয় সবকিছু আপনি নিজের ফোন থেকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। Google Family Link,Safe Lagon,Kids Place,Northon Family অ্যাপগুলোর মাধ্যমে।
আপনি নিজেও ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখুন :
এটা হল সবচেয়ে বড় কথা প্রথমে নিজেকে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। সন্তানের সামনে প্রয়োজন হলে বা না হলে নুন্যতম কারনে-অকারণে মোবাইলে চোখ রাখা যাবে না। আপনি যদি সব সময় ফোনে চোখ রাখেন তাহলে আপনার সন্তানও আপনাকে দেখে সেটাই শিখবে,তাই নিজেকে সংযত করুন।
শিক্ষামূলক অ্যাপ ও কনটেন্টে আগ্রহী করে তুলুন :
ছোট বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো এটি। কেবলমাত্র গান বা বিনোদন মূলক সাইট থেকে বের হয়ে এসে শিক্ষামূলক, ছবি অংকন, ছোট বাচ্চাদের ফানি ভিডিও, ইতিহাস ও সারা বিশ্বের ভৌগোলিকতার উপর তৈরি কিছু সাইটে আপনার সন্তানকে আগ্রহী করে তুলতে পারেন।
যা তার শিক্ষার দিকটাও পূরণ করবে এবং ভবিষ্যতে তার খোলামেলা এবং উদার মন মানসিকতা নিয়ে তৈরি হওয়ার রাস্তা তৈরি করবে, যা ভবিষ্যতে তাকে সমাজে বিবেকবান এবং মর্যাদা বাণ মানুষের কাতারে দাঁড় করাতে সাহায্য করবে।
সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন :
সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা সন্তানের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় একটি মাধ্যম। কেবলমাত্র শাসনকারী হিসেবে নয় সন্তান যখন আপনাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে সেটা তার মানসিক বিকাশের জন্য অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।
মাঝে মাঝে পাশাপাশি বসে যান, তার সাথে গল্প করুন, তার মনের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করা তার জন্য ক্ষতিকর। সে যেন কখনো আপনাকে লুকিয়ে ফোন ব্যবহার না করে ইত্যাদি।
রাতে ফোন দূরে রাখুন :
আপনার সন্তান যেন রাতে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হন। কেননা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফোন দেখা ঘুমের এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চরম অবনতি আনতে পারে। তাই রাতে যতদূর সম্ভব সন্তানের কাছ থেকে স্মার্টফোন দূরে রাখুন।
ফোন ছাড়া বিকল্প মজার কিছু করুন :
সব সময় সন্তানকে বিকল্প মজার কিছু করতে বলুন।যেমন : ছবি আঁকা, বই পড়া, ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত থাকা, মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলা করা, শিক্ষামূলক কিছু ভিডিও দেখা, নির্দিষ্ট সময় করে গুগল, চ্যাটজিপিটি, ডিপসিক এর আন্তর্জাতিক জ্ঞানের পরিমণ্ডলে ভ্রমণ করা। এতে করে স্মার্টফোনের ওপর আসক্তি অনেকটা কেটে যেতে পারে।
আরো পড়ুন : বাচ্চাদের কাশির সিরাপ কোনটা ভালো জেনে নিন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক থাকুন :
সাধারণত ১৩ বছরের নিচে বাচ্চাদের ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এর মত অ্যাপ গুলো ব্যবহার করা ক্ষতিকর। আপনার বাচ্চা যেন এই সকল অ্যাপ ব্যবহার করতে না পারে তা আপনি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন এইসব ছোট বাচ্চাদের জন্য নয়। ছোট বাচ্চাদের জন্য যে সকল এ্যাপস রয়েছে সেগুলো তাকে দেখতে উৎসাহিত করুন।
আশা করি,আপনার সন্তানের স্মাটফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।
শিশুদের মোবাইল আসক্তির কুফল :
উপরের অংশে আমরা শিশুদের মোবাইলে আসক্তির কারণ সম্পর্কে জেনেছি। এবং শিশুদের মোবাইল আসক্তির কুফল সম্পর্কে কমবেশি আমরা সকলেই অবগত রয়েছি। এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার উপায় সম্পর্কে সকলের অবগত থাকা উচিত। শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের কুফল বা ক্ষতিকর দিক সমূহ নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- দীর্ঘক্ষণ মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে বাচ্চাদের চোখের সমস্যার যেমন চোখ শুষ্কতা, ঝাপসা দেখা এবং দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- স্মার্টফোনের ব্লু লাইট ঘুমের হরমোন (মেলাটোনিন) কমিয়ে দেয় যার ফলে বাচ্চাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং ঘুমের সময় কমে আসে।
- স্মার্টফোনে আসক্ত বাচ্চাদের আচরণগত কিছু সমস্যা যেমন খুব সহজে রেগে যায়, অতিরিক্ত জেদ হয় ইত্যাদি দেখা দেয়।
- মোবাইল ফোনে আসক্ত বাচ্চারা অন্যদের সাথে খেলাধুলা, কথাবার্তা বা মেলামেশা কম পড়ায় সামাজিক দক্ষতা হ্রাস পায়।
- মোবাইল ফোনে আসক্ত শিশুদের পড়ালেখায় মনোযোগ কমে যায়। তাদের মন সবসময় অস্তিত্ব থাকে বলে সহজে ভুলে যায় ও শেখার আগ্রহ হারায়।
- সারাক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং শারীরিক ব্যায়াম আহত হয়। হলে অনেক বছর ওজন বেড়ে যায়, পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।
- অনিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে বাচ্চারা অনুপযুক্ত ভিডিও বা ছবি দেখে যা তাদের মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- অনেক সময় বাচ্চারা বাবা মাকে মিথ্যা কথা বলে এবং লুকিয়ে লুকিয়ে স্মার্টফোন দেখার অভ্যাস গড়ে তোলে।
ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা :
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির এক অনন্য সৃষ্টি মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন। বিশেষ করে ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোনের ব্যবহার যেমন উপকার করছে তেমনি এর অপব্যবহার ছাত্রদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ও ফেলছে। ছাত্র জীবনে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের শিক্ষার, স্বাস্থ্যের,সামাজিক এবং মানসিক আচরণে ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলঃ
- অতিরিক্ত গেম, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে ছাত্রদের মনঃসংযোগ নষ্ট হচ্ছে। তারা খেলাধুলা এবং পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে যার জন্য তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
- পড়াশোনা না করে মোবাইল ফোনে সময় নষ্ট করছে। এবং এর ফলশ্রুতিতে পাঠ্যবই সম্পর্কে জ্ঞান হারাচ্ছে এবং রেজাল্ট খারাপ করছে। যা আমাদের জাতির জন্য অমঙ্গল বই আনতে পারে।
- কিশোর-কিশোরী এবং তরুণরা মাত্রা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্ক বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন থেকে যে ক্ষতিকারক রেডিয়েশন বের হয় তা ব্রেন টিউমার, ব্রেন ক্যান্সার সহ নার্ভের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
- দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল দেখার কারণে ছাত্রদের অল্প বয়সে চোখের সমস্যা, মাথা ব্যথা, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সহ মানসিক সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে।
- ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতার মধ্যে আরেকটি অন্যতম হলো শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া। বর্তমানে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা কানের মধ্যে হেডফোন ঢুকিয়ে উচ্চ শব্দে গান শোনেন। এবং এটি দীর্ঘ সময় ধরে করার ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ছাত্ররা মোবাইল ফোনে আসক্ত হওয়ার ফলে পরিবার, বাবা-মা বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
- নিরাপত্তাহীন ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীরা অনৈতিক কনটেন্ট বা পর্ণ ভিডিওতে প্রবেশ করে যা তাদের আচরণে ও চিন্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে এসব কিছু দেখার ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায় বলে গবেষণায় দেখা যায়।
- অনেক সময় গেম মোবাইল রিচার্জ বা ইন্টারনেটের জন্য অপ্রয়োজনীয় খরচ ছাত্র-ছাত্রীরা করে থাকেন। যা তাদের পরিবারের উপর চাপ বাড়ায়।
আশা করি,ছাত্রজীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা সম্পর্কে আপনার অবগত হতে পেরেছেন। ছোট থেকেই আপনার সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় সম্পর্কে জানা উচিত। তা না হলে বড় হলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আপনি যদি ছোট থেকেই বিভিন্ন কৌশলে বাচ্চাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে আপনার বাচ্চার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
বাচ্চাদের স্মার্টফোন আসক্তি প্রতিরোধে করণীয় :
প্রযুক্তিনির্ভর যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ। এর যেমন উপকার রয়েছে তেমনি কিছু নেতিবাচক প্রভাব ও রয়েছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সব থেকে বেশি ছোট বাচ্চাদের উপর পড়ে থাকে। কেননা দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকা একজন বাচ্চার মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন করে।তাছাড়া বাচ্চারা খেলাধুলা, পড়াশুনা এবং সামাজিক দক্ষতা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। বাচ্চাদের স্মার্টফোন আসক্তি প্রতিরোধে করণীয় যে সকল বিষয় রয়েছে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- সর্বপ্রথম অভিভাবকদের উচিত স্মার্টফোন বাচ্চাদের থেকে দূরে রাখা। যদিও বর্তমান সময়ের সেটা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাকে নির্দিষ্ট সময় এবং কিছু নিয়ম নির্ধারণ করে স্মার্টফোন দিতে হবে। যেমন প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। এবং শিক্ষামূলক কিছু ভিডিও দেখার অভ্যাস করাতে হবে।
- অভিভাবকদের যত বেশি সম্ভব সময় কাটানোর অভ্যাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোন বাদ দিয়ে গল্প করা, মজার মজার কিছু কাজ করা,খেলাধুলা, ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজে বাচ্চাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
- পরিবারের বড়দেরও মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। কেননা অভিভাবকরা যদি সারাদিন মোবাইল বা ডিভাইসের মধ্যে থাকে বাচ্চারাও সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয় এবং মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে।
- বাচ্চাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে মোবাইল অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে।অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে যে তাদের চোখ, মস্তিষ্ক, ঘুমের সমস্যা, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হচ্ছে তা তাদেরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন।
- মাঝে মাঝে বাচ্চাদের বাহিরে বেড়াতে নিয়ে যান। প্রকৃতির সাথে সময় কাটালে বাচ্চাদের একঘেয়েমি দূর হয় এবং মন ফ্রেশ থাকে। এবং মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানো থেকে বিরত থাকে।
- খেলাধুলা ও পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাকে নিজের কাজকর্ম করতে শিখান। ছোট ছোট কাজ যেন তারা নিজেরাই করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাহলে তারা সারাদিন ব্যস্ত থাকবে এবং মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকতে পারবে।
- ছোট থেকে বাচ্চাদের খাওয়ানো এবং ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন দূরে রাখুন। এই সময়গুলোতে বাচ্চার সঙ্গে গল্প করুন। বিভিন্ন শিক্ষামূলক ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলুন তাতে তার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে।
- ছোট থেকেই আপনার শিশুকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মজার মজার গল্পের বই কিনে দিন এবং এগুলো পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। তাহলে মোবাইল ফোনে আসক্তি হওয়ার ভয় থাকবে না।
লেখকের মন্তব্য : সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায়
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত হতে পেরেছেন সন্তানের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় সম্পর্কে। বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আপনার সন্তানকে নিরাপদে রাখা আপনাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান স্মার্টফোন মানুষের জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু স্মার্টফোনের অপব্যবহার এবং ক্ষতিকর প্রভাব যেন আপনার সন্তানের উপর না পড়ে সেদিকে আপনাদেরই খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের আর্টিকেলে আমরা শিশুদের মোবাইলে আসক্তির কারণ এবং অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাছাড়া বাচ্চাদের স্মার্টফোনে আসক্তি প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে ও আপনারা জানতে পেরেছেন।
আপনার মঙ্গলবার সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদের ও পড়ার সুযোগ করে দিন। এরকম আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url