ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর কাজ, ব্যবহার এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

 

তীব্র বাতের ব্যথা, গাঁটে ব্যথা,হাড়ের দীর্ঘস্থায়ী জটিল ব্যথায় ডিক্লোমল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস জনিত জয়েন্টের ফোলাভাব ও ব্যথা উপশমে ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

হঠাৎ পা মচকানো ব্যথা, আঘাত জনিত তীব্র কালশিরে পড়া, কোন কারনে হাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যথা, গভীর ক্ষত বা অস্ত্রোপাচারজনিত ক্ষত ও আঘাতে ডিক্লোমল ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুন : টাফনিল  কিসের ঔষধ, খাওয়ার নিয়ম এবং কাজ সম্পর্কে জানুন। 

ডিক্লোমল একটি শক্তিশালী ব্যথা নাশোক এবং প্রদাহ রোধী ঔষধ যা দাঁতের ব্যথা উপশমের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে। ব্যথা কমাতে মূল ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে অস্ত্রপাচারের পরবর্তী সময় প্রদাহ এবং অস্বাভাবিক ব্যথা কমাতে ডিকলমল ট্যাবলেটের ঝুড়ি মেলা ভার। 

দাঁতের মাড়ি এবং আশেপাশে ফুলে গেলে ট্যাবলেট খুব ভালো কাজ করে। দাঁতের ইনফেকশনের ফলে ব্যথার কারণে জ্বর হলেও এই ট্যাবলেট খুব ভালো কাজ করে। ব্যথা, প্রদাহ এবং ফোলা কমাতে ডিকলোমল ট্যাবলেট খুব ভালো কাজ হয়।

এটি মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন সমস্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেনের যন্ত্রণা প্রস্তাগ্লান্দিন নামক রাসায়নিকের কারণে তীব্র হয় ডিক্লোমল এই রাসায়নিকের উৎপাদন বন্ধ করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। 

টেনশন টাইপের হেডেক বা সাধারণ মাথা ব্যথায় ডিক্লোমল খুব দ্রুত কার্যকরী হয়।মাইগ্রেনের সময় রক্তনালী গুলো ফুলে যায় এবং স্নায়ুতে চাপ দেয়, ডিক্লোমল এই ফোলা ভাব কমিয়ে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। ডিক্লোমল জ্বর কমাতেও সাহায্য করে।

ব্যথাযুক্ত ঋতুস্রাব,মূত্রনালীর ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, স্তনে ব্যথা ,জরায়ুর প্রদাহ, ফোলা ভাব ইত্যাদি প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রাখ।

নাক, কান, গলা যে কোন ধরনের ব্যথা ও প্রদাহে ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে অস্ত্রপাচার এর পূর্ববর্তী ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়।

কোন ওষুধ খাওয়ার আগে সে ওষুধ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া সকলেরই উচিত। তাই ডিক্লোমল ট্যাবলেট খাওয়ার আগে  ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর কাজ কি সেই সম্পর্কে জানুন। ডিক্লোমল (ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম) একটি শক্তিশালী ননস্টেরোইডাল প্রদাহ বিরোধী ঔষধ। যার রিউমাটয়েড ও প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যাথা নাশক ও জ্বর বিরোধী গুণাগুণ রয়েছে।মূলত বাত সংক্রান্ত ব্যথা, অস্ত্রোপচার, আঘাত জনিত ব্যথা প্রশমনে ভালো কাজ করে। 

এছাড়াও মচকানো, কাল শিরে পোড়া, বিচ্যুত হাড়ের আঘাত, গভীরে ক্ষত ও তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়ায় এর বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে। ধাত্রী ও স্ত্রী রোগ মূত্রনালী, জননালী,মাসিক,ঋতুস্রাব সংক্রান্ত ব্যথা প্রশমনে ভালো কার্যকরী। 

আরো পড়ুন : নিউরোবেস্ট এর কাজ এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানুন। 

নাক, কান, গলার সংক্রমণ ও ব্যথা প্রশমনে ডিক্লোমল খুব দ্রুত কাজ করে। এছাড়াও দাঁত ব্যথা মাড়িতে আঘাত জনিত প্রদাহ এবং ফোলা ভাব দুর করতে ও ব্যথা প্রশমনে ডিক্লোমল খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও কিডনি ও পিত্তনালীর ব্যথা প্রশমনে ভালো এই ডিক্লোমল ওষুধটি।

উপরের অংশে ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর কাজ কি সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন আমরা ডিক্লোমল ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো। সর্বপ্রথমে বলতে চাই ডিক্লোমল ট্যাবলেট চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই ট্যাবলেট টির স্বাভাবিক ডোজ একটি ট্যাবলেট, দিনে ২-৩ বার অবশ্যই খাবারের সাথে নেওয়া উত্তম। একটি ট্যাবলেট না ভেঙে পানি দিয়ে গিলে খাওয়া উত্তম। 

ডিক্লোমল ট্যাবলেট প্রায় ১১-১২ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে। তাই এই ঔষধ এর স্ট্যান্ডার্ড প্রস্তাবিত ডোজ দিনে ২ বার। সাধারণত চিকিৎসকরা ১-২ সপ্তাহ এই ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আর শিশুদের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী এই ওষুধের ডোজ চিকিৎসকরা ঠিক করে থাকেন।

আরো পড়ুন : D-rise 40000 খাওয়ার নিয়ম কাজ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন। 

মাত্রাঅতিরিক্ত কোনো ওষুধই সেবন করা উচিত নয় কারণ প্রত্যেকটা ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ডিক্লোমল এর ও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই এই ওষুধটি সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে ভালোভাবে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না।

গর্ভাবস্থায় ডিক্লোমল ওষুধটি ব্যবহার না করায় ভালো। এ সময় অন্য কোন ঔষধের বিকল্প না থাকলে এটা ব্যবহার করা যায়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত। কেননা গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মাত্রায় এ ওষুধ সেবন করলে বাচ্চার মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাছাড়া মাতৃদুগ্ধে খুবই অল্প পরিমাণে ডিক্লোমল থাকতে পারে যা নবজাতকের কোন ক্ষতি করার কথা নয়।

ডিক্লোমল (ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম) ১০০মি.গ্রা. এসআর মুন্ডি ফার্মা (বিডি) প্রাঃ লিমিটেড এর একটি মেডিসিন। এই ওষুধটির Unit Price : ৳ 4.00 এবং Strip Price : ৳ 40.00। এক পাতায় ১০ টি ওষুধ থাকে। এবং এক বক্সে ১০ টি পাতা থাকে। এক বক্স ওষুধের দাম (10×40)= ৳ 400.00।

প্রত্যেকটা ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ডিক্লোমল এর কিছু সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো নিম্নরূপ :

প্রশ্ন : ডিক্লোমল (Diclomol)  কি ধরনের ঔষধ?

উত্তর : এটি কম্বিনেশন ঔষধ, যাতে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ও প্যারাসিটামল ব্যথা নাশক ও প্রদাহ নাশক থাকে, এটি সাধারনত ব্যথা এবং জ্বর কমাতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন : ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর কাজ কি?

উত্তর : ডিক্লোমল সাধারণত নিচের সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয় দাঁতের ব্যথা, মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা, মাইগ্রেন,পিরিয়ডের ব্যথা, হাটু বা কোমরের ব্যথা, ফ্যাকচার বা ইনজুরি পরবর্তী ব্যথা নাশক হিসেবে।

প্রশ্ন : ডিক্লোমল (Diclomol) ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি ?

উত্তর : ডিক্লোমল যেহেতু ব্যাথা এবং প্রদাহ নাশক ঔষধ তাই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। মাথা ঘোরা, পেট ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিক, সর্বোপরি কিডনির মত স্পর্শকাতর অঙ্গে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রশ্ন : ডিক্লোমল খালি পেটে খাওয়া যায় কিনা?

উত্তর : না, এ জাতীয় ঔষধ খালি পেটে খাওয়া ঠিক নয। খাবারের পর ভরা পেটে খাওয়া উত্তম।

প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানকালে ডিক্লোমল খাওয়া যায় কিনা?

উত্তর : গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদান কালে এই ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে সন্তানের বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে, সেবন একান্ত প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্ন : ডিক্লোমল দীর্ঘদিন ধরে খেলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে?

উত্তর : এ ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে কিডনি, লিভার, পাকস্থলী সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এই ঔষধ দীর্ঘদিন সেবন থেকে বিরত থাকুন। 

প্রশ্ন : ডিক্লোমল ও অন্যান্য ব্যথা নাশক একসাথে খাওয়া যায় কিনা?

উত্তর : না, ব্যথা নাশক গ্রুপের একাধিক ঔষধ একসাথে সেবন করলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

প্রশ্ন : আলসার হলে ডিক্লোমল খাওয়া যায় কিনা?

উত্তর : না,এ জাতীয় ঔষধ গ্যাস্ট্রিক বা আলসারে খাওয়া যায় না। আলসার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা যাদের রয়েছে তারা এই ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন। 

প্রশ্ন : ডিক্লোমল (Diclomol)  দিনে কয়বার খাওয়া যায়?

উত্তর : ডিক্লোমল দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়া যায়, তবে রোগের মাত্রা অনুযায়ী ডাক্তার ডোজ নির্ধারণ করে থাকেন।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর কাজ কি সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ডিক্লোমল ট্যাবলেট এর ব্যবহার সম্পর্কেও আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ডিক্লোমল বিশেষ করে ব্যথা নাশক ওষুধ। এটি বাত ব্যথা  আর্থ্রাইটিস জাতীয় ব্যথা এবং ফোলা ভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া এর নাম উপকারিতা ও কার্যকারিতা রয়েছে। যেকোনো ওষুধ সেবনের পূর্বে তার সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরী। 

তাছাড়া যে কোনো ঔষধ সেবনের পূর্বে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। 

আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে পুরো আর্টিকেলটি প্রয়োজন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম নতুন নতুন বিষয়ে তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন। আর আর্টিকেলটি সম্পর্কে বিশেষ কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।